বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও পরিবহন সংক্রান্ত হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক) শিক্ষার্থী মো. লুৎফর রহমান রোববার (৩০ জুলাই) এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরিবহন পুলের ম্যানেজার বরাবর দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপাচার্য দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘উপাচার্য বরাবর বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগপত্র দিয়েছে৷ উপাচার্য বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
উক্ত শিক্ষার্থীর অভিযোগপত্রে জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমি গলা ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছি। গত শনিবার শ্বাসকষ্টসহ গলাব্যথা তীব্র হলে অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকারের শরণাপন্ন হই। তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে শের-এ-বাংলা হল থেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বারে পুনরায় ফোন দেই।
অ্যাম্বুলেন্স চালক এ সময় বলেন, সঞ্জয় সরকার ফোন না দেওয়া পর্যন্ত তিনি যেতে পারবেন না। এরপর সঞ্জয় সরকারকে পুনরায় ফোন দিলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিতে বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিলে তিনি নানাভাবে আমাকে কটূক্তিমূলক কথা বলেন এবং অ্যাম্বুলেন্সকে আসতে নিষেধ করেন। মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়ায় বাংলা বিভাগের অন্য শিক্ষক মোহাম্মাদ সাকিবুল হাসানকে ফোন দিলে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালক দপদপিয়া সেতুর টোল বক্স পার হয় ।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থী আরো জানান, ‘উন্মেষ রায় পরীক্ষায় নম্বর টেম্পারিং করে আমাকে নম্বর কম দেন। তার কোর্সে ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও নম্বর দেন না। তিনি ইচ্ছে করেই ব্যক্তিগত আক্রোশে নম্বর কম দেন।’
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী লুৎফর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মার্কসীট তুলে দেখি অন্য কোর্সে ৩.৭৫ বা ৩.৫০ অথচ তার কোর্সে ৩.২৫ এর উপর উঠেই না। সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েও তার কোর্সে ভালো নম্বর উঠাতে পারি না। তার রুমে গেলেও আমাকে বের করে দেওয়া হয়৷ স্যারের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কিন্তু সে আমার সাথে এমন আচরণ করছে কেন বুঝতে পারছি না।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, অনার্সে আমার সব কোর্সের রেজাল্ট ৩.৫০ উপরে কিন্তু শুধুমাত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের কোর্সগুলোতে ৩.৫০ এর নিচে৷ অর্নাসে আমাদের মোট ৭টি কোর্স নিয়েছেন তিনি। আশা করেছিলাম এসব কোর্সে সর্বনিম্ন জিপিএ ৩.৫০ পাবো। কিন্তু তার এসব কোর্সগুলো কেন এমন নম্বর পেলাম তা আমার বোধগম্য নয়৷ বাংলা ছোটগল্প – ১(কোড-১০৭) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা উপন্যাস -২(কোড-২০৩) পেয়েছি ৩.২৫ , বাংলা প্রবন্ধ -১ (কোড- ২০৭) পেয়েছেন ৩.২৫ , বাংলা কবিতা -৪ (কোড-৩০১)পেয়েছি ৩.২৫ , বাংলা রম্য সাহিত্য (কোড-৩০৮) ৩.০০, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য (কোড- ৪০৪) ৩.২৫ এবং ভ্রমন ও পত্র সাহিত্য (কোড -৪০৭) পেয়েছি ৩.০০।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় বলেন, নম্বর ট্যাম্পারিংয়ের বিষয়ে আমি জানি না, এরকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। কেউ অভিযোগ দিতেই পারে। আর এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন দিয়েছে ঐ শিক্ষার্থী তবে এরকম কোনো কিছু ঘটে নাই। আর আমাদের সাশ্রয়ের বিষয় আছে তো। সাধারণত জরুরী বিষয় হলে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টা দেখি।
এই বিষয় নিয়ে একাধিবার উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷
প্রসঙ্গত, এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক উষ্কানীর অভিযোগ উঠেছিল বাংলা বিভাগের ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে৷ ২০২২ সালের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বরাবর ৩৯ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি একটি অভিযোগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলমের কাছে জমা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে সে ঘটনা কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷