কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। আইনজীবী নিজেই রুলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ দাউদ।
এর আগে গত ২২ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এ রিট করেন। তিনি জানান, কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করে কোনো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোনো মৌখিক বিষয় নয়।
আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাকে একটি বাড়ি দেয়া হয়। বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে ‘একুশে পদক’ দেয়া হয়। সবকিছুরই ছবি, তথ্যসহ লিখিত দলিল আছে। কিন্তু নির্মম সত্য এটিই যে, ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে সরকারি ঘোষণার কোনো লিখিত দলিল বা প্রমাণ নেই।
বাংলাদেশের দু’টি আইনে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে। আগামীর প্রজন্ম একদিন হয়তো না-ও জানতে পারে যে, আমাদের জাতীয় কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম।
এছাড়া নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণার দাবিতে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার দাবি তোলা হয়েছে। নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে রিট করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবীরা হলেন- মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, মো. রেজাউল করিম এবং মো. আলাউদ্দিন।
এর আগে গত ৩১ মে ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাঠানোর পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ২২ জুন হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়।