ববি প্রতিনিধি: মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সাবেক শিক্ষার্থী শফিকুর রহমান ওরফে শফিক মুন্সির বিরুদ্ধে ৷
গত ২৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা নাবিলা হাসান (অর্থনীতি- ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর এই বিষয়ে অভিযোগ করেন৷
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, পড়াশোনা দুই বছর আগে শেষ হলেও শফিকুর রহমান ওরফে শফিক মুন্সি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করছেন। তিনি বিভিন্নভাবে অস্ত্র দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে থাকেন, অবৈধভাবে বিভিন্ন কাজ করতে বলেন, তার কথা না শুনলে তিনি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে সম্মানহানি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বারা হেনস্তা করার হুমকি দেন শিক্ষার্থীদের।
তিনি সকলের কাছে দাবি করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কথায় চলে এবং তার কারণেই সকলে এই অবস্থানে আছেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার কারণে ইতিমধ্যে ২ বার তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে ওই আপু। ২ বারই তিনি মুচলেকা প্রদান করেন। আর কিছুদিন যাবত তিনি আমাকেও মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর ভয় দেখিয়ে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন এর জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমি আমার নিজ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অর্থনীতির বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা নাবিলা হাসান জানান, অনেকদিন ধরে শফিকুর রহমান (শফিক মুন্সী) আমাকে বিরক্ত করে আসছে। মানসিকভাবে টর্চার করছে। আমি অনেক চেষ্টা করে তাকে ফেরাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমার নিরাপত্তার জন্য শফিক মুন্সির বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু এই অভিযোগই যেন এখন আমার জন্য কাল হয়ে গেছে।
অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য শফিক মুন্সি আমাকে শিক্ষক, রাজনীতিবীদসহ বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে এবং পরিবারকে প্রেশারাইজড করা হচ্ছে। নানা লোকজনকে দিয়ে আমাকে ফোন করে বলা হচ্ছে আমার জীবন শেষ করে ফেলবে অভিযোগ না তুললে। আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ আমি এর বিচার চাই ৷
ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথনের স্ক্রিনশট গত ৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভুক্তোভোগী নাবিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে উক্ত ঘটনা উল্লেখ করে পোস্ট করে লিখেন, ‘ছোট বোন হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে পাশে চাই। এই মুখোশধারী ভদ্রবেশী লোকটার বিচার চাই।’
শফিকুর রহমান ওরফে শফিক মুন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আঞ্চলিক একটি পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পড়াশোনা শেষ হলেও শফিক মুন্সি শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নং রুম দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একাংশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে এমন কর্মকাণ্ডে চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে তার সাথে শলাপরামর্শ করতেও দেখা যায়।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আবদুল কাইউম বলেন, বিষয়টি আমি জানি। তবে এটা ছোটখাটো বিষয়৷ এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের পথে। এই বিষয় নিয়ে নিউজ না করার পরামর্শ দেন এই প্রতিবদককে৷
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শফিক মুন্সি বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রথম বিষয়টি হল অভিযোগে বলা হয়েছে আমি জোর করে সিট দখল করে থাকি। আমার বক্তব্য হলো যার সিট দখল করে থাকি সে অভিযোগ করবে কিন্তু এ অভিযোগ করার এখতিয়ার তার নাই। দ্বিতীয় সংবাদ প্রচারের ভয়ভীতি দেখাই। এখানে যদি কাউকে ভয়ভীতি দেখাই সে অভিযোগ দিতে পারে। অন্যকারও অভিযোগ দেওয়ার এখতিয়ার আছে কি?