সময়টা ১৯৭১। বাঙালি জাতির নিজেদের অধিকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিলো ঠিক এই বছরটায়। বছরের শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুরু করেছিলো নানান ধরনের ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) অংশের শাসনক্ষমতা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিলো। তারা কথা রাখলো না। এরপর শুরু হলো স্বাধীনতা সংগ্রাম। এক ইতিহাস। এক নেতার ডাকে ঝাপিয়ে পড়লো পুরো জাতি। আজ সেই ডাকের ঐতিহাসিক দিন, ৭ই মার্চ।
৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাসের লড়াই এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
৭ই মার্চ বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম বারের স্বাধীনতা-সংগ্রামের রূপরেখা দেন। এ ভাষণে জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানের পাশাপাশি ছিল দিকনির্দেশনাও। সেদিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দেন, ‘সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙ্গালী মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই তেজদৃপ্ত ঘোষণাই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। বিশ্বে সর্বাধিক বার প্রচারিত ও শ্রবণকৃত ভাষণ এই ভাষণটি। ঐতিহাসিক ওই দিনে বেলা ঠিক সোয়া ৩টায় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন বাংলার বীর জনতা বজ্রনির্ঘোষে করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাকে অভিনন্দন জানান।
মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু যখন জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন, তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’—স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। এরপর বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন।
৭-ই মার্চ উপলক্ষ্যে কর্মসূচি
আগামীকাল ৭-ই মার্চ দিবস হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
বিকাল ৪টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে গৃহীত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
