বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে ভারতকে কড়া বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সম্প্রতি দেওয়া নানা বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাসহ নানা বিষয় উপস্থাপন করা হয়। এসব বিষয়ে কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছে ঢাকা।
অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি ও চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে দিয়েই ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এফওসি বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ের নানা ইস্যু আলোচনায় আসে। এতে ঢাকার হয়ে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। অন্যদিকে, দিল্লির পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
দুই সচিবের মধ্যে একান্ত আলাপসহ সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠক ঘিরে দুদেশের জনগণের নজরও ছিল ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায়।
এ বৈঠকের প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের মত, সাম্প্রতিক ইস্যুর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠককে দুদেশের মধ্যকার আইস ব্রেকিং (জমে যাওয়া বরফ গলা) হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এমন সময়ে দুদেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়াটাই একটা সফলতা। আশা করা যায়, এই বৈঠকের পর দুদেশেই তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে উভয় দেশ উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবে।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থান করে যে বক্তব্য দেন এই বক্তব্যের প্রতি আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তার বক্তব্য সরকার পছন্দ করছে না। এটা যে সরকার পছন্দ করছে না, সেটা শেখ হাসিনাকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।’
সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যেন হস্তক্ষেপ না করে। এই ব্যাপারে যদি তাদের কোনো সংশয় থাকে, তাহলে যে কোনো দেশের মতো তারাও আমাদের দেশে এসে দেখতে পারে, সত্যিকারে সংখ্যালঘুদের প্রতি কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যেভাবে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করেছে, তাতে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি।’
বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সীমান্তে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি।’ আমরা বলেছি, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংগতিপূর্ণ নয়।’ আমরা সবসময় বলেছি, ‘সীমান্ত হত্যা যেন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে।’ আমরা বলেছি, ‘আমরা কোনো অপরাধ সমর্থন করি না, একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডকেও সমর্থন করি না। কাজেই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে কথা বলছি, তার সঙ্গে সংগতি রেখে আমাদের যে অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক যে অঙ্গীকার হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার, সেটার বিষয়ে তারা যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে।’