আয়তনে ছোট হলেও জ্ঞানে ও গুণীজনদের গৌরবে ফেনীর অবস্থান অনেক উঁচুতে বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের ডীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, নতুনের কেতন উড়িয়ে এই সংগঠন বারবার দেখিয়ে দেয় পৃথিবীতে যত ঝড়ঝঞ্ঝা হোক তবুও তরুণ্য থেমে থাকার নয়।
মঙ্গলবার (৯আগস্ট) বিকেল ৩ টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে(কুবি) ফেনী জেলার আঞ্চলিক সংগঠন ‘ফেনী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি’র আয়োজনে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের হলরুমে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আয়েশা আক্তার। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নবীন ও বিদায়ী শিক্ষার্থীরা৷
ড. গোলাম মাওলা বলেন, আয়তনে ছোট হলেও দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিতে এগিয়ে ফেনী জেলা।
উপস্থিত নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বুক ভরা স্বপ্ন চোখ ভরা আশা নিয়েই তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছ। নিজেকে যত্নশীল করে গড়ে তুলবে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ৷ তারুণ্যের মধ্যে সেই শক্তি আছে,যার মধ্যে দিয়ে তারা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
তিনি বলেন, তোমরা কেন ভুলবে ফেনী জেলার কৃতি সন্তানদের কথা। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক শহিদ শহীদুল্লা কায়সারের কথা, কেন ভুলে যাবে জহির রায়হানের কথা, বিশিষ্ট নাট্যকার সেলীম আলদীনের অবদান। ড. ইনামুল হক ও লাকি ইনামের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা৷ ফেনী আয়তনে ছোট হলেও গুণে ও গুণীজনদের গৌরবে এই জেলা অনেক উঁচুতে অবস্থান করছে।’
আগস্ট মাস শোকের মাস এই সময়ে জাতীয় শোক চারদিকে এমনই মন্তব্য করে অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বলেন, এ মাসেই আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি। যিনি বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো অন্য বাংলাদেশ দেখতে পেতাম। এই শোকের মাসে আমি সেই মহান নেতার কথা স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, এই মাটি শহিদদের রক্তে রঞ্জিত।
তারুণ্যের শক্তির প্রতি প্রেরণা জুগিয়ে ড. গোলাম মাওলা আরও বলেন, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত সমাজ গড়তে হবে৷ বর্তমানকে পরিবর্তন করতে পারলেই ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে৷ অনেকে অতীত নিয়ে বসে আছে। আমরা বর্তমানকে সুন্দর করে নির্মাণ করতে চাই। তবেই ভবিষ্যত সুন্দর হবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বারবার যৌবনের গান গেয়েছেন এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তনে তারুণ্যের শক্তিটা প্রয়োজন। প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ করে আঘাত হানতে হবে৷
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আশারাখি জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নয়নের তোমরা ভুমিকা রাখবে। এত মন্ত্রণার পরও যেসব যন্ত্রণা, দুঃখ কষ্ট সবকিছুকে ছাপিয়ে তোমাদের নিজের লক্ষ ধরে রাখতে হবে।
‘আমার সেই মাটি ও মানুষের মাঝ থেকে যারা উঠে এসেছে তাদের স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা যদি আমি একটু হলেও বাড়িয়ে দিতে পারি তবেই আমার স্বার্থকতা’, যোগ করেন ড. গোলাম মাওলা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে শিক্ষক৷ এই আয়োজনের মধ্যে দিয়েই সংগঠনে আমার প্রথম পদচারণা। আমি বিশ্বাস রাখি, আমরা যে যেখানে যেভাবেই আছি কিংবা থাকি না কেন সবাই যেন একে-অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারি। হোক তা আর্থিক, মানসিক কিংবা কর্মজীবনে। আমাদের বন্ডিং এবং আত্মার সম্পর্ক সবসময়ই অটুট থাকবে। মানবিক কাজেও এই সংগঠন সংশ্লিষ্ট থাকবে৷’
সভাপতির বক্তব্যে মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সংগঠন আমাদের আত্মার বন্ধনকে দৃঢ় করে৷ শিকড়ের সন্ধানেই আমরা এই আঞ্চলিক সংগঠনে এক হয়েছি।
আশা রাখছি এই ধারাবাহিকতা অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।আমাদের আত্মিক এই সংগঠন আর্ত মানবতা তথা সামগ্রিক ক্ষেত্রে আরো বহুদূর, বহু মানুষের কাছে পোছে যাবে।’