জাতিসংঘের উত্থাপিত এক নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার জাতিসংঘের উত্থাপিত এই প্রস্তাবে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে আয়োজিত গণভোটকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং মস্কোর দাবিকৃত ভূখণ্ডের কোনো দখলকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য সমস্ত দেশকে অনুরোধ করা হবে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ১০-১ ভোট পড়েছে এবং চীন, ভারত, ব্রাজিল ও গ্যাবন এসময় ভোট প্রদানে বিরত ছিল।
প্রস্তাবটি রাশিয়ার ‘ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার বেআইনি আক্রমণ’ অবিলম্বে বন্ধ করার এবং ইউক্রেন থেকে তার সমস্ত সামরিক বাহিনীকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভোটের আগে বলেছিলেন যে রাশিয়ার ভেটোর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়া বলেছে তারা এটিকে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে নিয়ে যাবে, কেননা সেখানে কোনো ভেটো নেই।
তিনি আরও বলেন, তরা দেখাবে যে বিশ্ব এখনও এই সিদ্ধান্তে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করার পক্ষে রয়েছে।
আগামী সপ্তাহে এটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বিবৃতিকে সমর্থন বলেন যে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করেছে এবং এর নিন্দা করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যে এলাকাটিকে সংযুক্ত করার দাবি করছে সেটি ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে বড় জোরপূর্বক ভূখণ্ড দখল। এ বিষয়ে কোনো মধ্যপন্থার সুযোগ নেই।’
কাউন্সিলের ভোটটি ক্রেমলিন অনুষ্ঠিত এ জমকালো আয়োজনের কয়েক ঘন্টা পরেই অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়া অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়াকে অধিগ্রহণ করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং বলেন যে এগুলো এখন রাশিয়ার অংশ এবং মস্কো এগুলো রক্ষা করবে।
থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন যে অঞ্চলগুলো রাশিয়ায় যোগ দিতে চায় কিনা তা নিয়ে ‘জাল’ গণভোটের ফলাফল মস্কোতে পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং সবাই তা জানে। তাদের দিকে রুশ বন্দুক তাক করে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সনদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার পবিত্র নীতিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ’
থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘পুতিন ইউক্রেনীয়দের সংকল্পের ভুল হিসাব করেছেন। ইউক্রেনের জনগণ উচ্চস্বরে ও স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে তারা কখনই রুশ শাসনের অধীন হওয়া মেনে নেবে না।’
রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া গণভোটকে সমর্থন করে দাবি করেন যে ইতালি, জার্মানি, ভেনিজুয়েলা ও লাটভিয়া থেকে ১০০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ভোটটি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তারা এই ফলাফলকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণভোটের ফলাফল তাদের পক্ষে আসে। এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা ইউক্রেনে ফিরতে চায় না। তারা স্বেচ্ছায় আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেছে।
নেবেনজিয়া আরও বলেন, ‘আজকের উত্থাপিত এই খসড়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হলে, ফিরে তাকানোর সুযোগ থাকবে না।’
তিনি কাউন্সিলে পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রকাশ্য শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, কাউন্সিলের সদস্যদের নিন্দা জানিয়ে ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভেটোতে বাধ্য করার মাধ্যমে তারা নিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের শুরুতে গৃহীত একটি প্রস্তাবের অধীনে রাশিয়াকে আগামী সপ্তাহগুলোতে সাধারণ পরিষদের সামনে তার ভেটো রক্ষা করতে হবে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, ‘সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা উচিত। কিন্তু চীন বিরত ছিল। কারণ এটি বিশ্বাস করে যে নিরাপত্তা পরিষদের উচিত সংঘাতকে তীব্রতর করার এবং সংঘাত বাড়ানোর পরিবর্তে সংকট শান্ত করার চেষ্টা করা।’
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত রোনালদো কস্তা ফিলহো বলেন, গণভোটগুলোকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না এবং তার দেশ সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটি বিরত ছিল কারণ প্রস্তাবটি উত্তেজনা কমাতে ও ইউক্রেনের সংঘাতের সমাধান খুঁজে পেতে অবদান রাখেনি।