পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম টেড কেনেডি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর ছিলেন, যদিও ওয়াশিংটনের সেসময়ের প্রশাসন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানি সামরিক সরকারকে সমর্থন করেছিল।
মঙ্গলবার একটি সংবর্ধনার জন্য ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রয়াত কেনেডির ছেলে টেড জুনিয়র ও তার পরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানানোর সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার বাবা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় কণ্ঠস্বর। তিনি বাংলাদেশের বন্ধু হয়েছিলেন। তার প্রতি আমাদের অনেক শ্রদ্ধা আছে। আমরা তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।’
কেনেডি জুনিয়র ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নৈশভোজের আয়োজন করেন।
তারা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এসে পৌঁছালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তার সহধর্মিণী সেলিনা মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও তার সহধর্মিণী তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
এসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ড. মোমেন, কেনেডি জুনিয়রের বাবা এডওয়ার্ড এম কেনেডির স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য প্রদান করেন। কেনেডি জুনিয়র বক্তব্য প্রদান করেন।
সিনেটর কেনেডির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার কাছ থেকে দুটি জিনিস শিখেছি।
মোমেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তিনি (প্রয়াত কেনেডি) সর্বদা বলেছেন যে গণতন্ত্র কখনই নিখুঁত নয় এবং এটি একটি বিকশিত প্রক্রিয়া। আমি সত্যিই তা পছন্দ করেছি।’
প্রয়াত মার্কিন সিনেটর কেনেডির উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, এখনও পর্যন্ত গণতন্ত্রই হচ্ছে সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেনেডির কাছ থেকে তিনি আরেকটি জিনিস শিখেছেন তা হলো বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের জন্য সাহায্য করা এবং তাদের জন্য কাজ করা। এই দুটি জিনিস আমি আমার হৃদয়ে রাখি।
মোমেন বলেন, তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের বন্ধু। আমি তার সঙ্গে প্রথম দেখা করি ১৯৭১ সালে, যখন তিনি ভারতে বাংলাদেশি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং তখন থেকেই তিনি ছিলেন একজন বন্ধু, একজন পথপ্রদর্শক ও একজন আশা।
তিনি বলেন, ‘কেনেডি ছিলেন আশা ও বিবেকের চেতনা। তার উত্তরাধিকার চিরকাল বেঁচে থাকুক। তিনি আমার খুব প্রিয় এবং আমি সারাজীবন তার প্রচারণার জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করেছি।’
কেনেডি জুনিয়র ও তার পরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে মোমেন বলেন, কেনেডির মতো ব্যক্তিত্ব আমেরিকার রাজনীতিতে আইকন এবং বছরের পর বছর ধরে তারা আমেরিকার আত্মা ও বিশ্বের বিবেক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তার কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এখানে বাংলাদেশে তিনি একজন আইকন।’
অনুষ্ঠানে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন। বাংলাদেশে তার অনেক বন্ধু ছিল।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মহান অবদানের জন্য মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সিনিয়রকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘এটি এমন কিছু যা আমি কখনই ভুলব না। ধন্যবাদ জানাই শেখ হাসিনাকে।’
কেনেডি তার ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে মোমেন ও সেলিনা মোমেনকে তাদের উদারতা ও আতিথেয়তার প্রশংসার চিহ্ন হিসেবে উপহার দিয়ে বলেন, আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা তাই সম্মানিত। বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছ থেকে আমরা যে আতিথেয়তা ও স্নেহ পেয়েছি তাতে আমরা সবাই অভিভূত।
তিনি বলেন যে তাদের এখানে অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে, অবিশ্বাস্য মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে ও কথা বলেছে এবং নতুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন, যা ছিল একটি ‘শক্তিশালী অভিজ্ঞতা’।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীর বছর, দশক ও শতাব্দীতে অব্যাহত বন্ধুত্বের জন্য উন্মুখ।’
টেড কেনেডি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী উদযাপনের এক মাইলফলক হিসেবে ২৯ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করছেন।