সাম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হঠাৎ সৃষ্ট নানা ধরনের বিশৃঙ্খলামূলক পরিস্থিতি ঠেকানোর সময় কতিপয় পুলিশ সদস্যের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য এবার সতর্ক করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করা যাবে না। অপ্রীতিকর কোনো কিছুর জন্য পুলিশকে যাতে পত্রিকার শিরোনাম না হতে হয়। এতে করে দেশে-বিদেশে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এছাড়া সব পরিস্থিতিতে পুলিশকে ধৈর্য ধরে থাকা এবং নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে আগে।
কমিশনার রোববার মাসিক অপরাধ সভায় ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার থেকে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের এসব নির্দেশনা দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা মানবজমিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে এডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসের অপরাধ সভায় কমিশনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে ২৯শে জুলাই ঢাকার সকল প্রবেশ পথে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচির দিনে বিএনপি’র সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ওইদিন যাত্রাবাড়ীর ধোলাইখাল এলাকায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মারধর করা হয়।
এ প্রসঙ্গ টেনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ওইদিন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে কারা আঘাত করেছে এটা পুলিশ সদস্যদের দেখা উচিত ছিল।
কারণ এ ধরনের ঘটনায় কোনো অঘটন ঘটলে অনেকেই পুলিশের দিকে আঙ্গুল তুলতো। এছাড়া জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
ওইদিন রাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। ঘটনার সময় অতি উৎসাহী হয়ে অতিরিক্ত রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়া হয়েছে। কিন্তু পাশে দু’টি বড় হাসপাতাল ছিল। হাসপাতাল গুলোতে মুমূর্ষু অনেক রোগী শুয়ে ছিল। এ সব হট্টগোলের কারণে রোগীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। তাই এ রকম পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহী না হয়ে আশেপাশে কি আছে সেগুলো দেখে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ধৈর্য ধরে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকতা বলেন, সভায় কমিশনার ডিএমপি’র আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বেশি কথা বলেছেন। থানায় সেবার মান আরও কীভাবে বাড়ানো যায় এবং মানুষ যাতে আরও সহজে সেবা পায় সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। থানা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও ওয়ারেন্ট তামিল করার কথা বলেছেন।
আবাসিক হোটেলগুলো থেকে অতিথিদের যেসব তালিকা আসে ওই তালিকাগুলো প্রতিদিন পড়ে দেখার জন্য। কারণ অনেক ওসি এসব তালিকা হোটেল থেকে আসার পর একবারও পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না। পড়লে হয়তো আবাসিক হোটেলগুলোতে কারা থাকছে তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেত। অনেক অপরাধীও হোটেলে আত্মগোপনে থাকতে পারে। এছাড়া সব মামলা ওসিরা রুজু না করে অন্যান্য পরিদর্শকদের (তদন্ত ও অপারেশন) দিয়ে কিছু মামলা রুজু করানোর বিষয়ে কথা বলেছেন কমিশনার।
আরেক এডিসি বলেন, জুন ও জুলাই মাসে ১১ থেকে ১২টি ডাকাতির মামলা হয়েছে ডিএমপিতে। এসব মামলার মধ্যে কিছু মামলার কুল-কিনারা করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। তাই গুরুত্বসহকারে মামলার তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।