ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ)কে বলা চলে ‘ল্যান্ডার অব লাস্ট রিসোর্স’ অর্থাৎ ঋণ পাওয়ার সর্বশেষ আশ্রয়। তবে সেই ঋণের ফাঁদেই আটকাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়ার পর বিভিন্ন দেশকেই মানতে হচ্ছে নানা শর্ত। আর সেই শর্ত থেকে বেরিয়ে আসাও খুব একটা সহজ নয়।
আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় কিছু কঠিন ও অবশ্য পালনীয় শর্ত দেয়, যেগুলো যথাসম্ভব দ্রুত মেনে নিতে হয়। এ কারণে রাষ্ট্রগুলো সংস্থাটির কাছে হাত পাততে পছন্দ করে না।
আইএমএফ যে শর্তগুলো দেয় সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারি খরচ কমানো, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পুঁজি প্রবাহে বাধা দূর করা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসাগুলোকে বেসরকারি খাতের অধিভুক্ত করা, ভর্তুকি হ্রাস, কর বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তবে এই শর্তগুলো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থাভেদে পরিবর্তন হয় না। ফলে কোনো দেশের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, তাদের আইএমএফেএর ঋণ পেতে হলে এই শর্তগুলো মেনে নিতে হয়।
সম্প্রতি এর বড় নজির শ্রীলঙ্কা ও আর্জেন্টিনা। শ্রীলঙ্কান অর্থনীতির ভগ্নদশা শুরু হয়েছে আরও বেশ কদিন আগেই। তবে রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় আসার পর শেষ পর্যন্ত আইএমএফের কাছেই ফিরতে হয় দ্বীপরাষ্ট্রটিকে।
তবে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে দৌড়ঝাপ করছে শ্রীলঙ্কা। তবে এক্ষেত্রে আইএমএফ শর্ত জুড়ে দিয়েছে, ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এজন্য কমাতে হবে সরকারি ব্যয়।
আইএমএফ আরো জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় এখন যে সংখ্যক সরকারি পদ আছে তাও কমাতে হবে। বর্তমানে দেশটিতে ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।
এছাড়া শর্ত দেওয়া হয়েছে, সব পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করতে হবে এবং সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানের মধ্যে আছে সেগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এমনকি সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অবসরের বয়স ৬৫ থেকে ৬০ করার কারণেই একসঙ্গে এতগুলো পদ শূন্য হয়। যেগুলোতে নতুন করে আপাতত কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না। এছাড়া সরকারের আয় বাড়াতে শ্রীলঙ্কায় বছরের প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ট্যাক্স দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬৫ শতাংশ।