গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে বহিষ্কার ও মায়ের নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। আমি জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগ করি। এ জন্য দল যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা আমি মানি। বহিষ্কার নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা হয়নি। আপনাদের মাধ্যমে, ফেসবুকে, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। দীর্ঘ দেড় বছরে কী হয়েছে না হয়েছে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চেয়েছিলাম। আমার অপরাধ কী, এটা সামনাসামনি জবাব দিতে চেয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমার বিষয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু আদর্শের জায়গায় আওয়ামী লীগ করি। সে জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ যাঁরা সহযোগী সংগঠন করেন, তাঁরা অনেকেই আমার মা ও আমার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। কিন্তু সেখানে তাঁদের থ্রেট (হুমকি) দেয়, বহিষ্কার করে। বিভিন্ন কৌশলে তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। আমি চাই যাদের আদর্শ রয়েছে, এই লাখ লাখ মানুষকে যেন হয়রানি না করে। সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বলব—জনগণ যে রায় দেয়, জনগণ যেহেতু শহরের মালিক, তাই তাদের বিরুদ্ধে যেন অবস্থান না নেয়।’
গাজীপুরের মানুষ আমার মাকে “নগরীর মা” বলেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যখন একজন নারী সবার মা হয়ে যান, তখন কেউ সেই নারীকে পরাজিত করতে পারে না। আমার বিশ্বাস, আমার মাকে যেহেতু সবাই “মা” বলেছেন, তাই তাঁরা ২৫ তারিখে শুধু আমার মাকে ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যাবেন। আমার মা লাখ লাখ ভোটে জয়লাভ করবেন।’
#গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর এবং গাজীপুর সিটি একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সমালোচনা করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাচনে আ ক ম মোজাম্মেল হক ওপেনে নৌকার বিরোধিতা করে আনারসের নির্বাচন করেছেন। কই তখন তো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাহলে আমি আমার মায়ের নির্বাচন করতে পারব না কেন?’
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। সে এলাকার উন্নয়ন করেছে। মানুষের জন্য কাজ করেছে। এলাকায় ভোট চাইতে গেলেই এলাকাবাসীর সেই ভালোবাসা বুঝতে পারি। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। আগামী ২৫ তারিখের নির্বাচনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে সবার কাছে ভোট চাই।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর। দল মনোনয়ন দেওয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। দলের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে মেয়র পদে প্রার্থী হলেও যাচাই-বাছাইয়ে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে তাঁর মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। মায়ের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নামা জাহাঙ্গীরকে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। এর আগেও জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দলে ফেরার প্রায় পাঁচ মাস পর এবার তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।