বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভাবতাম আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচন আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট চুরি করে। এখন সুপ্রিম কোর্টে ভোট চুরি করছে।’
আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য চুরি। চুরি ছাড়া এদের আর কোনো কিছু নেই। চুরি করেই এদের চলতে হয়। এদের পেশা এবং নেশা হচ্ছে চুরি। দেশটাকে চুরি করে ফোকলা করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রচিত “আমার রাজনীতির রোজনামচা” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন নতুন চুরির জায়গা তৈরি করেছে পাতাল রেল। ৩০০ ফিটের রাস্তা ভেঙে পাতাল রেল করবে। ঢাকা শহরে প্রতি বছর চুরির জন্য রাস্তা ভাঙা হয়, কাটা হয়, আবার করা হয়। যেসব নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে, কংক্রিট খুলে পড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁশের বাতা বা সরু রড দেওয়া আছে। এমন বিল্ডিং তৈরি করছে যেখানে ২২ জন মারা গেল, সরকারের টনক নড়ে না। কারো কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত রাতে সর্বোচ্চ আদালতের বারের নির্বাচনে ফলস ব্যালট পেপার ছাপিয়ে সিল মারছিল, সেটা ধরে ফেলার কারণে প্রচণ্ড রকমের গোলযোগ হয়েছে। আমাদের যিনি ৭ বার সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সেক্রেটারি ছিলেন তাকে তারা আক্রমণ করেছে। এ কোন দেশ আমাদের! এ কোথায় আমরা দেশকে নিয়ে এলাম! এই কারণেই আওয়ামী লীগকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে যে, তারা এই দেশকে চরমভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কঠিন লড়াই করছি। এমন লড়াই লড়ছি যে লড়াইটা একটা ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে; যারা মানুষকে মর্যাদা দেয় না, ইতিহাসকে স্বীকৃতি দেয় না, দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্র-সংবিধানে বিশ্বাস করে না, সাম্য-মানবতা বোধ-ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করে না।’
এই বই যে কালকেই নিষিদ্ধ করা হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বই প্রকাশ করার অপরাধে প্রকাশনীকে বাংলা একাডেমিতে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দৈনিক বাংলা নিষিদ্ধ করেছিল, বিচিত্রা নিষিদ্ধ করেছিল, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত—সব বন্ধ করে দিয়েছিল। এরা আবার বড় বড় কথা বলে।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারাই নাকি এখানে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে, তারাই নাকি গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক! বরাবরই তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।’
তরুণ প্রজন্মকে “আমার রাজনীতির রোজনামচা” বইটি পড়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি এখন আর নলেজবেইজড নেই, এখন এটা হয়ে গেছে মানিবেইজড আর মাসলবেইজড। মানিবেইজড আর মাসলবেইজড রাজনীতি দিয়ে সত্যিকার অর্থে কিছু আনা যাবে না যেটা দেশে পরিবর্তন আনবে। নলেজবেইজড রাজনীতি একমাত্র দেশে পরিবর্তন আনতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ সরকারের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ চাল, ডাল, লবণ কিনতে পারে না, বাচ্চার মুখে একটা ডিম তুলে দিতে পারে না। সন্তানের স্কুলে কাগজ-কলম কিনে দিতে পারে না, ফি দিতে পারে না, বাসে উঠতে পারে না-হেঁটে চলে, সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার মুখে এমন বাগাড়ম্বর তুলছে যে, সব কিছু সুন্দর আছে। মধ্য আয়ের দেশ হয়ে গেছে। এখন সিঙ্গাপুর আর মালয়েশিয়া হয়ে যাবে। আমার দেশের শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ আমিষ খেতে পারে না। মাছে হাত দিতে পারে না। সেই দেশে তারা বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে।’
‘এই দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এই দেশের মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করবে এবং জনগণের সরকার নিয়ে আসবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।