জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরী বলেছেন, সারের দাবিতে কৃষকের আন্দোলনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই আন্দোলনে যোগ দেওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমার জেলায় সারের কোনো ক্রাইসিস নাই। ও (সাইদুর) সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য…। ও কীয়ের আওয়ামী লীগ।
চলমান কৃষি মৌসুমে সারের সংকট দেখা দেওয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা। এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার জেলার সদর উপজেলার তুলশীচর ইউনিয়নের গাড়ামারায় কৃষকরা মানববন্ধন করেন। সেখানে সারের ডিলারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন তুলশীচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। এই বক্তব্য রাখার দায়ে শুক্রবার তাঁকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বাক্, ব্যক্তি, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার, সভা-সমাবেশ ও নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে বলেও দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতির ৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে।
দলীয় গঠনতন্ত্রের সেই নিশ্চয়তা কাজে আসেনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এই নেতার৷
জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখায় কেন একজন দলীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হলো- জানতে চাইলে জবাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, তাঁকে (সাইদুর রহমান) মানববন্ধন না করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। সারের ব্যবস্থা করা হবে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তিনি ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তো সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে পারেন না।
এদিকে বহিষ্কৃত নেতা সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি সরকারের বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। সার না পেয়ে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করতে ডিলারের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, যখন সার পাইতেছি না বলে, মানববন্ধন করবেন! তখন কার বিরুদ্ধে যাইতেছে? জেলার সাধারণ সম্পাদক তার (সাইদুর) নাম ধরে বলেছে, তাকে সাময়িক বহিষ্কার কর। জেলার সাধারণ সম্পাদক হুকুম দিলে তো কাজ করতেই হবে। সারের সংকট নিরসনে সেদিনও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন ফারুক চৌধুরী। এখন আর কোনো সংকট নেই। খোলাবাজারেও সার পাওয়া যাচ্ছে।
বহিষ্কৃত সাইদুর রহমান জানান, সেই মানববন্ধনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কসহ অনেক নেতা ছিলেন। তাঁরা সবাই কৃষক। তিনি নিজেও একজন কৃষক। তাঁর ৫ বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। তাঁর নিজেরও দুই বস্তা (১০০ কেজি) ইউরিয়া সার প্রয়োজন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কমবেশি আড়াই হাজার কেজি ইউরিয়া লাগবে চলতি মৌসুমে।
তিনি বলেন, কিন্তু ডিলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সার দিচ্ছে না। তুলশীচরের বাকি ৮ ওয়ার্ড সার পেয়েছে। সার না পেয়ে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাঁদের দাবির মুখেই সেদিন তিনি ডিলারের দোকানে গিয়েছিলেন। ডিলারকে না পেয়ে মানববন্ধনে যোগ দেন, কৃষকদের শান্ত করতে। ওই দিনের ঘটনার পর শনিবার ১০০ বস্তা সার এসেছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হয়েছে। সাইদুর রহমান নবনির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বীদের পক্ষে ছিলেন। জেলার সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নতুন নেতারা তাঁকে (সাইদুর) রাখতে চান না। সার নয় মূল সমস্যা স্থানীয় রাজনীতিতে।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ করে সারের জন্য আন্দোলন করবে কেন? মিথ্যা মানববন্ধন করছে। সারের ক্রাইসিস থাকলে মাইনা নিতাম। সমাবেশের তো যুক্তি লাগব।
যুক্তি ছাড়া সমাবেশ বিএনপি করে। মিথ্যা কথা কইয়া সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগ কীয়েরে করব? বলেও প্রশ্ন তুলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা৷