অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় কঠিন এক বছর ২০২২ সাল। তবে এতেই শেষ না বরং আরো কঠিন হতে চলেছে আসন্ন ২০২৩ সাল। এমনই আশঙ্কার কথা লেখা হল স্বয়ং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কলমে।
নিজের ব্লগে তিনি আগামী আর্থিক বছরে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বিশ্ব অর্থনীতিকে, তা নিয়ে লিখেছেন।
২০২২ সালে আর্থিক সংকটের করোনা মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকেই প্রধানত দায়ী করছেন আইএমএফ প্রধান। আইএমএফের প্রধানের আশঙ্কা, এই দুই ধাক্কায় নড়বড়ে অবস্থায় চলে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির কাঁপুনি সম্ভবত কমবে না আগামী অর্থবছরেও। স্বাভাবিক ভাবেই আশঙ্কা বাড়়বে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মহামন্দার।
ক্রিস্টালিনা বলেন, মুদ্রাস্ফীতির দৈত্যকে বোতলে পোরাই এখন আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বিশ্বের সকল দেশের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম পরাতে চেষ্টার কমতি না যেন না থাকে। কারণ, মহামারীতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি যখন যুদ্ধের অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম, তখন মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়ত অনুঘটকের কাজ করে চলেছে।
অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা ২০২২-এ ৫.৭ শতাংশ হবে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতে তা পৌঁছবে ৮.৭ শতাংশে। এ ক্ষেত্রে ক্রিস্টালিনার বার্তা, ‘ডু ইট নাও!’ বা যা করার এখনই করতে হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক বৃদ্ধি কমার সম্ভাবনা প্রবল। মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে বৃদ্ধির খাতে ভাটা এসে পড়েছে বলে মনে করছেন আইএমএফ প্রধান। বিবেচনায় আছে চীনের বৃদ্ধি থমকে যাওয়ার পরিস্থিতিও। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও আরও ধীর হয়ে উঠতে পারে। তার সরাসরি প্রভাব পড়বে জি-২০ দেশগুলোর ওপর।
ক্রিস্টালিনা বিভিন্ন অর্থনীতির চালিকাশক্তির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেন রাজস্ব সংগ্রহ ও তা খরচের উপর নজর দেয়। মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখায় যা নির্বিকল্প বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি দেনার দায়ে পড়া দেশগুলোর জন্য সতর্কবাণী দিয়েছেন আইএমএফ প্রধান। বেলাগাম ঋণের জালে না ফেঁসে সরকারি খাতে অর্থ সরবরাহের নীতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
খাদ্য নিরাপত্তায় আশঙ্কার কথাও ঘুরেফিরে এসেছে ক্রিস্টালিনার ব্লগে। সামগ্রিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়লে, বা মুদ্রাস্ফীতির হার আকাশ ছুঁলে, বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশে খাদ্য সঙ্কট মাথাচাড়া দেবে। তা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে জি-২০ দেশগুলোকে। স্থানীয় চাহিদা সামাল দিতে ভারতের মতো বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একেও আশঙ্কার কারণ ভাবছেন আইএমএফ প্রধান।