সাজ্জাদ শরিফ
দাওয়াত মানে আল্লাহর পথে ডাকা। দীন ও ইসলামের আলোকিত পথে মানুষকে পথ দেখানো। তাছাড়া আরও ব্যাপক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে দাওয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হলো। দাওয়াত অর্থ ঈমানের পথে ডাকা, দাওয়াত মানে সত্য-সুন্দরের প্রকাশ, দাওয়াত মানে ইসলামের মহান বাণী প্রচার।
দাওয়াত মানে হচ্ছে মানব রচিত মতবাদ মূলোৎপাটন করা, দাওয়াত মানে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করে মিথ্যার পুঁতিগন্ধময় অসারতা দূর করা। দাওয়াত মুসলিম উম্মাহর সংশোধনের কথা বলে। দাওয়াত উম্মাহর শত্রুদের শনাক্ত করে। দাওয়াত মানে জান্নাতের রাস্তা দেখানো।
সব নবী-রাসুলের কাজ একটাই ছিলো। মানুষকে দীনের দাওয়াত দেওয়া আল্লাহমুখী করা। তাি এর গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহই তো বলেছেন এর শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্যের কথা। আর কার কথা উত্তম হতে পারে? যে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকে! শুধু তা-ই নয়, দাওয়াত ও তাবলিগের অবহেলার জন্য জবাবদিহিতার কঠোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কোরআনের পাতায়। এ হুঁশিয়ারি শুধু দায়ির জন্য নয়, সতর্ক করেছেন নবিদেরও। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল আপনি দাওয়াত দিন, আপনার প্রভু আপনার ওপর যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন, আর যদি না দেন; তাহলে রেসালত ও দাওয়াতের পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পরেননি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ দায়িত্বকে দাওয়াত বা আহবান বলে অভিহিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রতি মানুষকে ডানকুনি হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন।” [সূরা নাহল: ১২৫]
অন্যত্র এই দায়িত্বকেই তাবলিগ বা প্রচার বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন: “হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না।” [সূরা মায়েদা : ৬৭]
কোরআনুল কারিমে বারবার বলা হয়েছে যে, প্রচার বা পোঁছানোই রাসূলগণের একমাত্র দায়িত্ব। নিচের আয়াতে বলা হয়েছে: “রাসূলগণের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।” [সূরা নাহল: ৩৫]
কোরআনের আয়াত ছাড়াও অসংখ্য হাদিসে দাওয়াতের অপরিসীম গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা.বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের দাওয়াত দেয়, তার জন্য সেই পরিমাণ নেকি রয়েছে, যে পরিমাণ নেকি উক্ত দাওযাতের অনুসারীগণ পাবে। কিন্তু তাদের নেকি বিন্দুমাত্র কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দাওয়াত দেয় তার জন্য ঐ পরিমাণ পাপ রয়েছে, যে পরিমাণ পাপ উক্ত পথের অনুসারীগণ পাবে। কিন্তু তাদের পাপ বিন্দুমাত্রও কম করা হবে না।’ (মুসলিম)
আবু আবস রা.-এর বর্ণিত হাদিসে নবীজি আরও বলেন, আল্লাহর পথে চলে কারো দু’পা ধুলায় মলিন হলে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।’ (বুখারি)
সাহল ইবনু সাদ রা.বলেন, রাসূল সা.বলেছেন, একদিন আল্লাহর পথে সময় ব্যয় করা অথবা প্রস্ত্তত থাকা পৃথিবী এবং তার উপর যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি)
এই হলো দাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্ব। যারা শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য দাওয়াত প্রদান করে, আল্লাহর রহমত তাদের ঘিরে রাখে সবসময়। তারা ইহ-পরকালে সর্বাধিক সম্মানিত মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন হয়।
দাওয়াতের দায়িত্বপালনকারী মুমিনকেই সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন ‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে’। (হামিম সিজদাহ-৩৩)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। (সুরা ইমরান-১০)
আরবের শ্রেষ্ঠ নবী নবিয়ে রহমত সা.-এর মৃত্যুর পর নববী এই দায়িত্বের ভার এসে অর্পিত উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর। তাই তো আল্লাহর কাছেও শ্রেষ্ঠ উম্মতের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে এ জাতি। আজকের এ দীনে আমরা যদি আবারও সেই আলোকিত পথে হাঁটতে পারি, উম্মাহকে দেখাতে পারি হারানো ঐতিহ্যের সেসব সোনালি পথ, তাহলে পথহারা এ জাতি আবারও ফিরে পাবে আল্লাহর অবারিত রহমতে পূর্ণ এক শুভ্র নির্মল এক সুন্দর সবুজ পৃথিবী। এমন সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে নীরব এক হাতিয়ার এই তাবলিগি মেহমত। এজন্যই চূড়ান্ত মুক্তি ও সফলতা লাভের প্রত্যাশায় নিরন্তর ছুটে চলছে দাওয়াত ও তাবলিগের আলোকিত এক কাফেলা। যাদের একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহভোলা মানুষগুলোকে আবারও আল্লাহমুখী, পরকালমুখী করে তোলা। আল্লাহ আমাদের এ আলোকিত কাফেলার সারথি হওয়ার তাওফিক দান করুন।