নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান ইরানের বিক্ষোভ আজ ৪১তম দিনে গড়িয়েছে। একইসাথে মাসা আমিনির মৃত্যুরও ৪১ দিন পূর্ণ হতে যাচ্ছে আজ। ইরানের প্রথা অনুযায়ী কারও মৃত্যুর পর ৪০তম দিনে শোকপালনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। গতকাল সেই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে পুরো ইরানজুড়ে সন্ধ্যার পরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলো আন্দোলনকারীরা।
চলমান এই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রায় আড়াইশ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এদিকে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আহভাজের শহিদ চামরান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে শোনা যায়, ‘একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হতে পারে কিন্তু অবমাননা মেনে নেব না।’ এর আগে মঙ্গলবার বেহেশতি ইউনিভার্সিটি ও খাজে নাসির তুসি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তেহরানে অবস্থিত।
কাল হামেদান শহরের বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাবেশ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এক সরকারি কর্মকর্তা এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ জানান পড়ুয়ারা।
এর আগে, সোমবার তেহরানে মেয়েদের একটি স্কুলেও ঝামেলা বাধে। সরকারি-বিরোধী বিক্ষোভে তেহরানের শহিদ সদর বালিকা কারিগরি স্কুলের ছাত্রীরা কতটা প্রভাবিত, তা পরীক্ষা করতে ছাত্রীদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখতে চেয়েছিলেন স্কুলের কর্মীরা। তা থেকে শুরু হয় বাদানুবাদ।
সোমবারের এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, বিক্ষোভ চলাকালীন বেশ কিছু ছাত্রীর রক্তচাপ নেমে গিয়েছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে। সে জন্য জরুরী পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে সামনের সারিতে আছেন নারী ও স্কুলছাত্রীরা। ইসলামি প্রজাতন্ত্রে নারীদের প্রচলিত কঠোর পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর পাঁচ সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ইরান এখনও উত্তপ্ত। মানবধিকার সংগঠনগুলির দাবি, আন্দোলনে অন্তত ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আটক করা হয়েছে অন্তত ১২৫০০ জনকে।
ওদিকে, আটক বিক্ষোভকারীদের বিচার শুরু করেছে ইরানের বিচার বিভাগ। ইসলামি শাসনের বিপক্ষে যায় এমন যেকোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে দেশটির বিচার বিভাগ।
তেহরানের রৌয়েদাদ-২৪ সংবাদ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২৪ অক্টোবর থেকেই রুদ্ধদ্বার বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে ইরানের বিচার বিভাগ। প্রাথমিকভাবে আটক ২০১ জনকে অভিযুক্ত করে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।