সম্প্রতি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাতভর আটকে রেখে এক ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে৷ এ ঘটনায় দেশজুড়েই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়টির হলগুলোতে নতুন শিক্ষার্থীদের মাঝে একরকম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মারধরের আশঙ্কায় গণরুম ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর থেকে জেরা ও ঝামেলা এড়াতেও অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুর রাজ্জাকের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এই হলে আবাসিক আসনসংখ্যা ৫৬৮টি। গণরুমসহ ৮৭৮ ছাত্রী হলে থাকেন। ছয়টি গণরুমে থাকেন অন্তত ১৩৪ জন। ছয়টি গণরুমের মধ্যে প্রজাপতিতে থাকেন ৩৩ ছাত্রী। প্রজাপতির দুটি কক্ষ। একটি কক্ষে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই কক্ষে থাকেন ১৬ জন।
গণরুমে সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ওই রাতে প্রজাপতিতে ধমকের সুরে কয়েকজনকে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানকার একজন ছাত্রী গণরুমের কাউকে বের হতে দেননি। এমনকি ওয়াশরুমেও যেতে দেননি। এ সময় এক ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা কথা বলতে শোনা যায়। একপর্যায়ে ডাইনিংয়ে নিয়ে তাঁকে ময়লাযুক্ত গ্লাস পরিষ্কার করতে দেন।
তারা আরও বলেন, নির্যাতনের ঘটনার সময় পাশের কক্ষে একজনের পরীক্ষা থাকায় তিনি পড়ছিলেন। ওই ছাত্রী উচ্চ স্বরে কথা বলতে নিষেধ করলেও তাঁরা (নির্যাতনকারী) কিছু শোনেননি। বিষয়টি গণরুমের অনেকেই দেখেছেন এবং জানেন।
ভিডিও ধারণের বিষয়টিও সঠিক। কিন্তু কেউ ভয়ে কথা বলছেন না জানান ওই হলের এক শিক্ষার্থী।
সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, হকে আসলে ছাত্রীদের বাড়ি চলে যাওয়ার কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। কেউ বাইরে গেলে বা ভেতরে প্রবেশ করলে কোনো রেজিস্ট্রিতে লেখা হয় না। হলের কয়েকজন ছাত্রী বাড়ি চলে গেছেন। হয়তো তাঁদের ক্লাস-পরীক্ষা নেই, এ জন্য বাড়ি চলে গেছেন।
তবে হলের কতিপয় ছাত্রী বলেন, ঘটনার পর থেকে হলের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়ায় তাঁরা জেরার মুখে পড়তে পারেন বলে অনেক ছাত্রী মনে করছেন। এ জন্য অহেতুক ঝামেলা এড়াতে অনেকে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বর্তমানে বাড়িতে থেকে ওষুধ সেবন করছেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের পাশাপাশি কয়েক দফা নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।