রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আবারও গুলি করে এক রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতার নাম মোহাম্মদ হোসেন ওরফে শফিক (৩০)।
সোমবার(২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আশ্রয়শিবিরের বি-১৬ ব্লকের ডিআরসি পুষ্টিখানা অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসার) ১০-১২ জনের একটি দল তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ সময় চারটি গুলির আওয়াজ শুনতে পান তারা।
নিহত মোহাম্মদ হোসেন ক্যাম্প-৮ পশ্চিম অংশের বি ব্লকের প্রধান নেতা ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের বি-৩২ ব্লকের মোহাম্মদ সিদ্দিকের ছেলে।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে আশ্রয়শিবিরের একটি মাদ্রাসার বার্ষিক অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে আরসা নামধারী কয়েকজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মোহাম্মদ হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বুকে ও গলায় গুলি লাগে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় মোহাম্মদ হোসেনকে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের ব্র্যাক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেলেও আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় একই আশ্রয়শিবিরের আরও চার রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আশ্রয়শিবিরের বি-৬৪ ব্লকের খালপাড় এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
ঐ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চার রোহিঙ্গা (ক্যাম্প-৮ (পশ্চিম) বি-৩৫ ব্লকের বসিন্দা মোহাম্মদ সালাম (৩২), বি-৫৪ ব্লকের বাসিন্দা মো. শফি (৬৩), বি-৫০ ব্লকের বাসিন্দা মো. শরীফ (৫৫) ও বি-৫৫ ব্লকের বাসিন্দা মো. নাসের (১২)। বর্তমানে তাঁরা কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব
গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ১৫টির বেশি রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার, মিয়ানমার থেকে আনা মাদকের (ইয়াবা ও আইস) ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য লোকজনকে অপহরণ, লোকজনের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথ অভিযান পরিচালনা জরুরি।
এদিকে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও এপিবিএন। তাদের ভাষ্যমতে, ৯ ডিসেম্বর উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে এপিবিএনের সঙ্গে গোলাগুলিতে আরসার দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
গত চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৫ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন আরসা সদস্য, সাতজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি)। অপর তিনজন সাধারণ রোহিঙ্গা।