আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে থমকে যায়। বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে বহু আলোচনা হয়েছে। আর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। কারণ এতে সরকার কেবল অস্বস্তিবোধ করেন না, রাগান্বিতও হন।
জাতীয় সংসদে সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলনে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এ বৈঠক শুরু হয়।
রাশেদ খানন মেনন বলেন, দুর্নীতি উন্নয়নের অনুষঙ্গ। কিন্তু যেসব দেশ উন্নয়নের পথে রয়েছে তারা দুর্নীতি নিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন তার পার্টির দেড় লাখ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। যার মধ্যে পলিটব্যুরো সদস্যও রয়েছে। ভিয়েতনাম তার উপ-প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু আমরা মন্ত্রী-আমলাদের ক্ষেত্রে কি পেরেছি? পারি নাই।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, আমি আজ আর খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার নিয়ে বিশেষ কথা বলব না। এই নিয়ে সংসদে অনেক কথা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকারের ভাবখানা এমন যে, ‘বক আর ঝক যত কানে দিয়েছি তুলো, মার আর ধর যত পিঠে বেধেছি কুলো।
এ সময় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পশ্চিমা বিশ্ব যে পুরো যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। তাদের এই যুদ্ধ চক্রান্তে বাংলাদেশকে তারা জড়াতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এর থেকে এখনও পর্যন্ত দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই কারণেই সেই সব শক্তি আমাদের নির্বাচন, গণতন্ত্র নিয়ে এত সোচ্চার। আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন নিজেদের ব্যাপার। তারা বরং নিজের ঘর সামাল দিক, পরে অন্যের কথা বলুক। এটা ঠিক যে এই সরকার শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এ নিয়ে কোন জবাবদিহি চাওয়া যাবে না। সর্বশেষ গতকাল সরকার বিদ্যুৎ আইনের যে সংশোধনী এনেছে তা এই ক্ষেত্রে জনগণের প্রশ্নের অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করলেও ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে দেশের তরুণদের বড় অংশ তাদের হতাশা ঢাকতে মাদকে আশ্রয় নিচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও তার কোনো কার্যকর ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। মাদকাসক্তি দেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক অগ্রগতিকে টেনে ধরছে, আরও ধরবে।’
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপির ২৭ দফায় যে রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা দেয়া হয়েছে তা কার্যতঃ রাষ্ট্রকে অবৈধ পঞ্চম সংশোধনীকালে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রয়াসমাত্র। তাদের ‘রেইনবো নেশন’-এর অর্থ স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাবিরোধীদের এক কাতারে দাঁড় করানো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে রদ করা।