এবার নির্বাচন কঠিন হবে। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাই জোর প্রস্তুতি নিতে হবে বলে দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা যাকে দেওয়া হবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে জয়ী করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে জয় সহজ হবে না। জিততে হলে জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়ান।
রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠক ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে।
সভায় সংসদ-সদস্যদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, লালমনিরহাটের মোতাহার হোসেন, রাজবাড়ীর কাজী কেরামত আলী, লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, চট্টগ্রামের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যারোমা দত্ত, রুবিনা আকতার মিরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই রাজবাড়ীর দুই এমপি জিল্লুল হাকিম ও কাজী কেরামত আলী বাহাসে লিপ্ত হন। এমপিরা তাদের বক্তব্যে স্থানীয় গ্রুপিংয়ের তথ্য দলীয় সভাপতির দৃষ্টিতে আনেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে এমনটি নয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় একটি মহল চায় বাংলাদেশে পাপেট (পুতুল) সরকার নির্বাচিত হোক। তারা আবারও একটি অনির্বাচিত সরকার আনার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি ছারখার করে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, সভায় সংসদ-সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যোগ্যতা দিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে হবে। এ সময় মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা না করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলেও তারা বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। যদি না আসে তবে আরও অনেক দল নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুত আছে।
সভায় বিএনপির আন্দোলন ও ২৮ অক্টোবরের বিষয়েও কথা ওঠে। তিনি বলেন, ওরা আন্দোলন করে করুক। আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবে আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস বা নৈরাজ্য করতে চাইলে ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র জানায়, সভায় নারায়ণগঞ্জের এমপি একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত এমপিদের অনেকেই তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান। শামীম ওসমান বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েন না। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যিনি জিতে আসতে পারবেন তাকে মনোনয়ন দেবেন।
তিনি বলেন, ‘হাজার বছরে বঙ্গবন্ধু এসেছেন একজন। ভবিষ্যতে লাখ বছরে একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু এখন জেলায় জেলায় খন্দকার মোশতাকরা আছে। ওরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। ওদের চিহ্নিত করতে হবে। সাবধান থাকতে হবে।’
সভায় রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী নিজ জেলার দলীয় কোন্দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন।
লালমনিরহাটের এমপি মোতাহার হোসেন অভিযোগ করেন, এলাকায় দলের ঐক্য থাকলেও অনেক সময় ঢাকা থেকে অনেকে সমস্যা তৈরি করে। ঢাকায় বসে এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি করে। এখন নির্বাচন সামনে রেখে অনেক মনোনয়নের ফেরিওয়ালা বেরিয়েছে।
এরা সারা বছর মাঠে থাকে না, নির্বাচন এলে তৎপরতা বাড়ে। এমপিদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এদের বিষয়ে নেত্রী পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে, আমি সেভাবেই মনোনয়ন দেব।