কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে মাদকদ্রব্য পাচারের সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন রেজাউল করিম (৪৭) নামের এক ব্যক্তি। এ সময় তার কাছ থেকে ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড়ে গ্রিনলাইন পরিবহনের কাউন্টার থেকে তাঁকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল।
এ সময় তাঁর স্ত্রী মলিনা পাশাকেও আটক করা হয়। তাঁদের দুজনকেই কক্সবাজার সদর মডেল থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার রেজাউল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুরের সমেশপুর এলাকার বাসিন্দা।
মাদকসহ আটকের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত আছেন। ছয় মাস ধরে তিনি টেকনাফের আলীখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপালন করছেন।
রেজাউলের টেকনাফ আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএনের সদস্য কী না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আটকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দপ্তরটির কর্মকর্তা তন্তুমনি চাকমা। তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে ইয়াবা পাচার করছেন, এমন খবর পেয়ে টেকনাফ থেকে তাঁদের পিছু নেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে তাঁরা কক্সবাজারে পৌঁছে কলাতলী মোড়ের গ্রিনলাইন পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট নেওয়ার জন্য যান। এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের ব্যাগ তল্লাশি করেন।
তিনি জানান, এ সময় এপিবিএন কর্মকর্তার স্ত্রীর ব্যাগে ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি পান তাঁরা। পরে দুজনকে আটক করে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আনা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) তন্তুমনি চাকমা আরও জানান, আটকের পর রেজাউল ১৬ এপিবিএনের অধীনে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে কর্মরত আছেন বলে দাবি করেছেন। সেখানে তাঁর পদবি এসআই। তাঁর কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হলেও কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, রেজাউলের দেওয়া তথ্যগুলো তাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন। রেজাউল কত দিন ধরে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত, সেটি নিয়ে তদন্ত করছেন বলে জানান তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আটক রেজাউল সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৭ মে তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান ঢাকা থেকে টেকনাফে তাঁর কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। পরে যাওয়ার সময় ইয়াবার চালানটি তাঁর স্ত্রীর লাগেজে রাখেন তিনি।
রেজাউল দাবি করেছেন, ইয়াবা পাচারের বিষয়টি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা জানতেন না। তিনি ইয়াবাগুলো টেকনাফ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় রেজাউলের দুই সন্তানকেও। তাঁরা জানান, ১৭ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মায়ের সঙ্গে টেকনাফে বাবার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু বাবা যে লাগেজে ইয়াবার চালান নিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি তাঁরা জানতেন না।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই তন্তুমনি চাকমা বাদী হয়ে রেজাউল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাঁদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এ মামলাটির তদন্ত করবে।