লোকসভার নির্বাচনে রীতিমতো বড় আকারের ধাক্কা খেয়েছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে নিজেদের একক আধিপত্য আর থাকছে না নরেন্দ্র মোদির দলের। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবার পুরোপুরি বুমেরাং হয়ে এসেছে তাদের জন্য।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর্ণাটক বিধানসভার ১৩৫ আসন নিজেদের করে নিয়েছে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। ক্ষমতাসীন বিজেপির কাছে রয়েছে ৬৬ আসন। ধর্মনিরেপেক্ষ জনতা দল পেয়েছে ১৯ আসন।
বিজেপির ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই এবার কাল হয়েছে দলের জন্য। হালাল মাংস, হিজাব, আজান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো দলটি। এসব ইস্যুতে জনগণের পাশে ছিলো কংগ্রেস।
বিজেপির পতনের শুরুটা হয়েছিলো হিজাব বিতর্ককে কেন্দ্র করে। কর্ণাটক সরকার আচমকাই সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে। যা নিয়ে পুরো দেশেই বিতর্কের শুরু হয়। এমনকি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত আলোচনা গড়ায়।
এছাড়াও কর্ণাটকের বিধানসভায় গেল বছর পাশ করা হয় অ্যান্টি হালাল বিল। এই বিলের আওতায় রাজ্যে হালাল মাংস বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত হিন্দু ধর্মের নবরাত্রি এবং উগাদি উৎসব চলাকালে হালাল মাংসের বিক্রি বন্ধ করতে সরব হয় বিজেপির সমর্থকরা।
আর সহসাই সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে সেই আইন পাশও করিয়ে নেয় বিজেপি। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বিলের সমালোচনা করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে এটি ছিলো একটি অ্যান্টি মুসলিম বিল।
এছাড়াও স্থানীয় পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়াকে নিষিদ্ধ করেছিলো বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। যার কারণে ক্ষমতাসীন দলের উপর নেতিবাচক ধারণা আরও পোক্ত হয় সাধারণ জনগণের।
এছাড়াও প্রথম থেকেই কর্নাটক বিজেপিতে বড় নেতার অভাব সুস্পষ্ট ছিল। যা এই ধরাশায়ী অবস্থার অন্যতম কারণ বলেই মনে করা হচ্ছে। ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে বাসবরাজ বোম্বাইকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, জনসংযোগে তিনি ব্যর্থ ছিলেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস শিবিরে ডি কে শিবকুমার, সিদ্দারামাইয়ার মতো বড় মাপের নেতা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে ছিলেন।
লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মন জয় করতে ব্যর্থ ক্ষমতাসীন দলটি। ভোটের আগে প্রচারে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের।
কিন্তু, সেই প্রভাব ভোটবাক্সে পড়ল না। গত এক বছরে দলটির কার্যক্রমে আস্থা হারিয়েছে সেখানকার মানুষ। আদিবাসী, ওবিসি এবং ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্কও হারিয়েছে বিজেপি।