কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরও একটি সহিংসতাময় দিন পার হলো বুধবার। দিনের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উচ্ছেদের অভিযান। রাতে বেগম রোকেয়া হল থেকে যার শুরু। পরবর্তীতে একে একে সাধারণ ছাত্রদের হাতে আসতে থাকে হলগুলো।
দুপুরে ছিল দিনের একমাত্র নির্ধারিত কর্মসূচি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র আবু সাঈদের গায়েবানা জানাযা পড়ানো হয়। এরপরেই পরিস্থিতি মোড় নেয় সহিংসতার দিকে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশনা এলেও আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদেরই একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে ফেস দ্য পিপলের সঙ্গে। ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন নিজের চোখে দেখা ঘটনা। পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হলো, “সকাল থেকেই হল গুলোতে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে হল বন্ধ হয়ে যাবে বলে তথ্য আসতে থাকে। তাই সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে সিনেট ভবনের দিকে আগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এরপর আমরা ফিরে যাই আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে। যেখানে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশি হামলার পর শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল ছুড়ে। জবাবে পুলিশ লাঠি, টিয়ারশেল। সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হয়।”
তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “হল ভ্যাকেন্টের সংবাদ শুনে যেসব শিক্ষার্থীরা শাহবাগ দিয়ে বের হচ্ছিল তাদের ফোন চেক করছিল ছাত্রলীগ। পাশেই ছিল পুলিশ এবং বিজিবির পাহাড়া। আন্দোলনে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে নির্যাতন করা হচ্ছিল।”
হল বন্ধের প্রসঙ্গে এফএইচ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, হল বন্ধের ঘোষণা এসেছে দুপুরে। এরপর ছেলেদের কয়েকটা হলে প্রোভোস্টদের কাছে যাওয়া হয়। শুরুতে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে তারা রাজি হয় হলের সকল সুবিধা (ইলেক্ট্রিসিটি, ওয়াটার সাপ্লাই, ডাইনিং, ক্যান্টিন) খোলা রাখার। কিন্তু বিকেলের পরে আবার পরিস্ততি পালটে যায়। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।”
“মেয়েদের সবগুলো হলে বলা হয়েছিল নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীরা হলে থাকলে নিরাপত্তা সহ বাকি সব সুবিধা হল প্রশাসন দিবে। কিন্তু সাড়ে ৬টার দিকে আবার উলটো ঘোষণা আসে। ৮টার মধ্যে সবাইকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।”
রাত ১১টা নাগাদ তিনি জানান, ক্যাম্পাসের হলগুলো বর্তমানে প্রায় খালিই রয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন খবর নিয়েও সতর্ক থাকার আহ্বান তার। জানালেন, রাতের ক্যাম্পাস নিয়ে অনেক বক্তব্যই আন্দোলনকারীদের মনোবল ভঙ্গের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।