বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সম্প্রতি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত করতে এক অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল সব প্রতিষ্ঠানকে যে দলীয়করণ করেছে এটাই তার প্রমাণ। এসময় তিনি ডিসি-এসপিরা আওয়ামী লীগের বাবা বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, চাকরিবিধিতে বলা আছে- সরকারি কর্মচারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাদের কাজ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের আগে যে শপথ নিয়েছিলেন; সেই শপথ ভঙ্গ করে আমলাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের কর্মী।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ঠাকুরগাঁও মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলনকশার কাজ শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিসি-এসপি, ইউএনও, ওসিদের বদলি শুরু হয়েছে।
এসময় তিনি আশঙ্কা করে বলেন, এবারের নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ করে নিয়ে যেতে পারে- তাহলে আমাদের (বিএনপির) নেতাকর্মীদের কচুকাটা করবে। তাই তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের জীবনবাজি রেখে প্রতিরোধ করতে আহবান জানান।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন না, আর করতেও দেওয়া হবে না। এ দেশের মানুষ তা করতে দেবে না। আজকে শুধু আমরা নই, আন্তর্জাতিক মহল বলছে- আওয়ামী লীগের অধীনে আগের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এবারও যদি সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয় সেটি তারা গ্রহণ করবে না।
তিনি বক্তৃতার একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন মহীয়সী নারী। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম থেকে কোলের দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বোরকা পড়ে নিরাপদের জন্য ঢাকায় আসেন। তবে ঢাকায় এসে তিনি পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ৯ মাস কারাবন্দি ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে ভেবেছিলেন বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে এই মহীয়সী নারীর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন গৃহবধূ। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বেগম খালেদা জিয়া হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তাকে মুক্তি দিতে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে।
সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ক্যাসিনো সম্রাট লুটেরা ও টাকা পাচারকারীদের জামিন দিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। তিনি এখন চিকিৎসার অভাবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন।
জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি বলে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা। এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এসময় কয়েকজন মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তাদের ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বলেন, জিয়াউর রহমান নাকি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন! ডাহা মিথ্যা কথা বলতে আপনাদের বুকে বাধে না? আরে, মহান এ নেতাকে তো আপনারা হত্যা করেছেন। খন্দকার মোশতাক হত্যা করেছেন। আপনাদের নেতারা, মন্ত্রীরা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে তার বুকের (বঙ্গবন্ধু) রক্তের ওপর দিয়ে গিয়ে শপথ নিয়েছেন পার্লামেন্টে।’
তিনি বলেন, সেদিন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর সদস্যরা খন্দকার মোশতাককে স্যালুট দিয়ে আনুগত্য ঘোষণা করেন। সুতরাং উল্টাপাল্টা কথা বলে লাভ হবে না। কারণ তখন বিএনপি তৈরি হয়নি। জিয়াউর রহমান তখন ডেপুটি চিফ ছিলেন। তার কোনো নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী; কিন্তু তারাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। কয়েকটি টিভি চ্যানেল বিএনপির বিষোদগার করতে এখন ওঠে-পড়ে লেগেছে। তারা সরকারের সাফাই গাইছে।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাঈদী একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম ছিলেন। তার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে হয়নি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টকে ধ্বংস করে একটি সিলেকশন পার্লামেন্ট করে রেখেছে। এ পার্লামেন্টের এমপিরা ডুগডুগি বাজায়। আলোচনা হয় না জনগণের কোনো কথা।
পরে তিনি খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
এ অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, আল মামুন আলম, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী, আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. জাফরুল্লাহ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।