গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা শুধু আমাদের দলের পক্ষ থেকে নয়, ৩৬টি দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ ন্যাড়া বারবার বেলতলা যায় না। বহুত হয়েছে। এ মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সোমবার (১৭ জুলাই) খুলনার ডাকবাংলো মোড়ের বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে তিনি একথা বলেন। ‘তরুণ জাগলে বাঁচবে দেশ, ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। যারা নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে পারে না। তাদের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আগে আইন ছিল নির্বাচনি এলাকায় কোনো গোলমাল হলে নির্বাচন কমিশন সেটা বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু এখন সেই আইন বন্ধ করা হয়েছে। আর বেচারা হিরো আলম ঢাকায় নির্বাচনে করতে গিয়ে হামলার শিকার হলো। কিন্তু তাকে প্রটেকশন করতে পারল না নির্বাচন কমিশন। এদের (নির্বাচন কমিশন) অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব না। নির্বাচন কমিশন বদলাতে হবে। যারা যোগ্য তাদেরকে আনতে হবে। নতুন একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার কথা। একদফা এক দাবি-শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। যদি কথা না শোনা হয় তবে ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথে ফয়সালা করে আমরা সত্যিকার অর্থে ৭১’ সালের যুদ্ধের চেতনায় আমাদের নেতা তারেক রহমানের ৩১ দফার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। সেই বাংলাদেশে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। তাদের উপরে ওঠার ব্যবস্থা থাকবে। তারা চাকরি-ব্যবসা করতে পারবে। মানুষ তার স্বাস্থ্যসেবা পাবে। শিক্ষা পাবে, নিরাপত্তা পাবে।’
আওয়ামী লীগ হিরো আলমকেও সহ্য করতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন হিরো আলম। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের লোক না। আওয়ামী লীগের কি দেউলিয়া অবস্থা হয়েছে যে, তাকেও সহ্য করতে পারছে না। তাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একটা তামাশার চিত্র তৈরি হয়েছে। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা বেঁচে থাকলে বলতেন এমন দেশ তারা চান না।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা আমাদের ভ্যানগার্ড। যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে তরুণরাই এগিয়ে আসে। আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি তাতে ১৭ জন প্রাণ দিয়েছেন। ৬শ নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। আমার বক্তব্যের আগে স্বামীহারা স্ত্রীর কথা, বাবাহারা সন্তানের কথা আপনাদের উদ্দেশে যারা বলেছেন আমি তাদের কথা মন দিয়ে শুনি। আমি আবেগে আপ্লুত হই। কি জবাব দেব। আমার জবাব দেওয়ার কিছু নেই।’
বর্তমানে আওয়ামী লীগ শুধু পোশাক পালটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আ.লীগ সরকার বাকশাল কায়েম করেছিল। পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র ৪টি পত্রিকা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। এখন তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। বর্তমানে রাষ্ট্রের কোনো নিরাপত্তা নেই। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েই যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছে তারা যদি টাকা ফিরিয়ে আনে তবে আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ দিচ্ছে। গাড়ি ব্যবহারকারীদের ট্যাক্সের বাইরে সারচার্জ দিতে হবে। সবই তাদের পকেটে যাচ্ছে। কৃষক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। খুলনাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুট মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরা ১০ টাকার দামের চাল খেতে পারছে না। হাসপাতালে সেবা নেই। বিএনপির নাম গন্ধ থাকলে সরকারি চাকরি হচ্ছে না। হলেও ২০/৩০ লাখ টাকা লাগছে। এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে হবে। জোর করে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।’
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকার পাতা দেখলেই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা চোখে পড়ছে। অথচ আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে ঘুরতে গেছেন। আরেকজন প্রভাবশালী ঢাকার মেয়র তাপস। তিনিও তার পরিবার নিয়ে ইউরোপ ট্যুরে। মানুষকে বিপদে ফেলে তারা বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। মঞ্চে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।