ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে ভোলার নিকটে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করলেও বৃষ্টিপাতের কারণে দ্রুত দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। বিষয়টি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর অনুসারে, সিত্রাং খুব দ্রুত উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয় ও বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে এবং বর্তমানে ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।
মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুটের অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সামনের অংশটি সোমবার সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশে আঘাত হানতে শুরু করে এবং এর কেন্দ্র মঙ্গলবার ভোরে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে।
ওই সময়ে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ায় ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটারে পৌঁছেছিল।
সিত্রাং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে উপড়ে যাওয়া গাছ ও এর ডালপালার আঘাতে মানুষ মারা যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং অবিরাম বৃষ্টির কারণে শহর এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়।
১৯টি উপকূলীয় জেলায় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের আশেপাশের প্রায় সাত হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জোর দিয়েছিল। সোমবার গভীর রাতের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সিত্রাং আছড়ে পড়ার সময় পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি মানুষকে এইসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়।
ইতোমধ্যে দক্ষিণের তিনটি বিভাগের কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নদীবন্দর সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাবিবগঞ্জ, বরিশাল সিলেট, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর নদী বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সাত হাজারেরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে সমস্ত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নোঙর রাখতে বলা হয়েছে।
অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভূমিধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য পার্বত্য জেলার কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে সংবাদদাতারা সোমবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন।
এদিকে, রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের অনেক এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত। যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংকে দায়ী করেছে।
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরবরাহ নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণকারী দুটি সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ডেসকোর কর্মকর্তাদের মতে, সিমপুর, উলান ও মানিকনগর গ্রিড লাইনে ত্রুটির কারণে অনেক এলাকা ঘন্টার পর ঘন্টা ব্ল্যাকআউটের সম্মুখীন হয়েছে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ঢাকার ধানমন্ডি, শেরেবাংলানগর, কাকরাইল, কাজলা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনে গাছ ভেঙে পড়ায় অনেক এলাকায় ব্ল্যাকআউটও হয়েছে।