চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রশিবির সন্দেহে ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের ‘নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুই ছাত্রকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই দুই ছাত্রকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
গুরুতর আহত দুই ছাত্র হলেন জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিল (২২) ও সাকিব হোসেন (২২)। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রশিবির সন্দেহে গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্যাতন করেন। একই সময় এস এ রায়হান (২১) ও মোবাশ্বির হোসেন (২২) নামের অপর দুই ছাত্রকে নির্যাতন করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ৪ ছাত্রই চমেকের ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে ওই চার ছাত্রকে ছাত্রাবাসের নিজ নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে তাঁদের ২ ঘন্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। রায়হান ও মোবাশ্বির বাড়িতে ফিরে যান। জাহিদ ও সাকিব চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। তখন ঘটনা জানাজানি হয়।
চিকিৎসাধীন দুই ছাত্রের বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, দুজনের অবস্থাই স্থিতিশীল। তাঁদের জীবনের আশঙ্কা নেই। তবে একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য তাঁদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
চমেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারপরও কেন এই ঘটনা ঘটল, কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা চমেকের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি খতিয়ে দেখছে।
এ ঘটনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী চমেক ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী জড়িত বলে কলেজ ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে। তবে মারধরের শিকার ছাত্ররা কারও নাম বলেননি।
মারধরের অভিযোগের অস্বীকার করে চমেক ছাত্রলীগের মহিবুলপন্থী গ্রুপের নেতা অভিজিৎ দাশ বলেন, ‘তাঁরা (চার ছাত্র) শিবির করেন। গোপনে এই কাজগুলো তাঁরা করে যাচ্ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারা হয়নি।’
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, চমেকে আহত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। তবে কারা তাঁদের মেরেছেন, তা তাঁরা স্বীকার করেননি। তবু আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
চচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ সক্রিয়। মহিবুলের বাইরে সক্রিয় সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের একটি পক্ষ।
এর আগে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাঁর মাথার খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এ ঘটনায় চমেক ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।