চীনে গত এক সপ্তাহ ধরে হুহু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শনিবার টানা চতুর্থ দিনের মতো দৈনিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে চীনে। বুধবার থেকে শনিবার এই চার দিনের প্রতিদিনই গত প্রায় তিন বছরের পুরো করোনা মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ দৈনিক করোনা ভাইরাসের রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে চীনে।
এদিকে করোনা আটকাতে চীন সরকারের কঠোর পদক্ষেপের জেরে শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। দেশটির একটি ভবনে আগুন লেগে ১০ জন নিহতের পরই এই বিক্ষোভের সূচনা। আগুনে মারা যাওয়া প্রত্যেকেই ওই ভবনে আইসোলেশনে ছিলেন বলে জানাজানি হবার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চীনের জনগণ।
সবশেষ কয়েকদিনে চীনের রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য শহরগুলোতে করোনা সংক্রমণ আটকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ফের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে চীন সরকার। এ বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে দেশটিতে চলছে বিক্ষোভ। সাধারণ অনেক মানুষকে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের পদত্যাগ চেয়েও অনেকে স্লোগান দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি দেশটিতে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সাংহাই শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের অনেককে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে। রাজধানী বেইজিং ও নানজিং শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সাংহাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে ‘শি জিন পিং সরে দাঁড়ান’ ‘কমিউনিস্ট পার্টি সরে দাঁড়াও’ বলে চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছেন। তাদের অনেকের হাতে কোনো কিছু না লেখা সাদা ব্যানার ছিল। অনেকেই আবার মোমবাতি জ্বালিয়ে ও ফুল দিয়ে উরুমকি শহরে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
চীনে সচরাচর এ ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায় না। কারণ, দেশটিতে সরকার নিয়ে সরাসরি কোনো সমালোচনার ফল হতে পারে কড়া শাস্তি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘শূন্য কোভিড নীতি’ নিয়ে মানুষের অসন্তোষ বরাবরই এড়িয়ে এসেছে চীন সরকার। তার জেরেই এ বিক্ষোভ। শূন্য কোভিড বা করোনা রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন শি জিন পিং। সম্প্রতি তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন এ নীতি থেকে সরে দাঁড়াবে না।
সরকারের ‘জিরো কোভিড’ নীতির জেরে গত প্রায় তিন বছর যাবৎ চীনের জনগণ একদিকে যেমন স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দিনের পর দিন লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের ফলে কর্মসংস্থান হারিয়ে বহু মানুষ চরম আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভও শুরু হয়েছে। এর ফলে সম্প্রতি কঠোর কোভিড বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেই ফের এমন ব্যাপকহারে করোনার সংক্রমণের ফলে দেশটির মানুষের জীবন ফের দুঃসহ হয়ে পড়তে পারে।