কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ছিল ইবি প্রশাসন ও বিচার বিভাগীয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা, মীম, তাবাসসুম, উর্মি, মোয়াবিয়া ও লিমা শারীরিক-মানসিকভাবে ভিকটিমকে (ফুলপরী) নির্যাতন করে। ১০৫ নম্বর রুমে রাত ৮টায় প্রথমে হেনেস্তা করা হয় তাকে। অন্তরা সবাইকে একটি করে চড় মারার নির্দেশ দেন। উর্মি, তাবাসসুম ও মোয়াবিয়ারা ফুলপরীকে হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নামায়। মীম জোর করে হাত ধরে ফুলপরীকে নির্যাতন করে। উর্মি ও মীম তাকে অমানবিক নির্যাতন চালায়। এছাড়া ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেন লিমা।
এদিন সকালে আদালতে ইবি প্রশাসনের রিপোর্ট দাখিল করা হয়। আদালত এটি দেখেন। পরে আদালত জানতে চান ইবির কোনো আইনজীবী আছে কি না। প্যানেল ‘ল’ ইয়ার? তখন একজন আইনজীবী বলেন আছেন। এরপর আদালত প্রতিবেদন পড়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন। তখন প্রতিবেদন পড়ে শোনানো হয়। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার আদালতে এই প্রতিবেদন জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান মিল্টন। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এটি উপস্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি র্যাগিংয়ের নামে এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন শিক্ষককে নিয়ে এই কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
নির্যাতনের ওই ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির রিপোর্টও ১০ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত দুজনকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি।
পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় তাকে এলোপাথাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে।