কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে এ পর্যন্ত নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ২৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে গ্রেফতারের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
সম্প্রতি তারা চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে-মো. আব্দুল কাদের(২৪), মো. ইসমাইল হোসেন(২২), মুনতাসির আহমেদ ওরফে বাচ্চু(২৩) এবং হেলাল আহমেদ জাকারিয়া(৩৩)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে লাকসামে র্যাব-১১ ও গোয়েন্দা শাখা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,এলিট ফোর্স গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিছু লিফলেট, কট্টরপন্থী মতামতের কিছু বইও জব্দ করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান মইন।
তিনি বলেন, তারা জঙ্গি সংগঠনটির আমির (প্রধান) মাহমুদসহ ছয় কাউন্সিল বা শুরা সদস্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আরও জানিয়েছে যে জঙ্গি গোষ্ঠীটি অর্থের বিনিময়ে তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র কিনতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন উৎস থেকে তারা তহবিল পায়।’
২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়া’ (পূর্ব হিন্দের জামাতুল আনসার) গঠিত হয়েছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল ইসলাম এবং হরকাত-উল-জিহাদ-আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) সহ বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের কিছু নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে কট্টরপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রম শুরু করে।
২১ অক্টোবর এলিট ফোর্স জানায় যে তারা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি থেকে সদ্য চালু হওয়া জঙ্গি সংগঠনের সাত সদস্য এবং কেএনএফের তিন সদস্যসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাব জানায়, ২০২১ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার আমির পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক সশস্ত্র গ্রুপ কেএনএফের সঙ্গে আগামী বছর পর্যন্ত এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিষয়ে একটি চুক্তি করেছিলেন।
এলিট ফোর্সটি জানায়, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা এবং কেএনএফ সদস্যদের খাওয়ার খরচ বহন করতে হবে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে তিন যুবকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে আট যুবক নিখোঁজ হয় এবং দুদিন পর এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
ঘটনাটি মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দেয় এবং র্যাব ভিকটিমদের উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত শুরু করে।
গত ১ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ যুবকদের একজন শারতাজ ইসলাম নিলয়(২২) বাড়ি ফেরেন।
গত ৬ অক্টোবর নিলয়কে জিজ্ঞাসাবাদে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিখোঁজ চার যুবকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, প্রথমে সংগঠনটির সদস্যরা কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যুবকদের টার্গেট করতো।