আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বিতর্কিত জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইমরান আহমেদকে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তাকে বদলি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপসচিব নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিসি ইমরান আহমেদ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। পরদিন মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সেই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে ডিসি ইমরানকে বলতে শোনা যায়, ‘যে সরকার এই উন্নয়ন করেছে, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সেই সরকারকে আবার নির্বাচিত করে, আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। এটা হবে আমাদের প্রত্যেকের অঙ্গীকার। আমি এটা মনে করি। আপনারা নিজের চোখে দেখে সরকারের প্রতি অকৃতজ্ঞতা করবেন না।’
ডিসির এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে ডিসি ভিডিওতে যা বলেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। নির্বাচন সামনে নিয়ে এখন একজন ডিসি এমন কথা বলতে পারেন না। তবে কেউ বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করেছে কিনা তাও যাচাই করা হবে। এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ, বক্তব্য টুইস্ট করা যায়। ডিসির বক্তব্য খতিয়ে দেখার পর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় ডিসি ইমরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গতকাল বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ডিসির দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে ওই চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পক্ষপাতহীন নিরপেক্ষ আচরণ করতে হয়। এটি সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট সব আইনের অর্থ ও অন্তর্নিহিত চেতনা। সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ নং অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৫ ও ৯১ (গ) নং অনুচ্ছেদসহ আরও বিভিন্ন আইন ও ধারায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট। নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার কেবল তফসিল ঘোষণার পর নয়, সব সময় বিদ্যমান থাকে।
চিঠিতে ইসি আরও জানায়, জেলা প্রশাসকরা সাধারণত রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নির্বাচনের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন তারা। এ অবস্থায় সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে মো. ইমরান আহমেদকে ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া, এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রকার দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখা সমীচীন হবে।
একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন বলে নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।