আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনে সাংবাদিকদের সবাই খুশি হবেন। আগামী সেপ্টেম্বরেই এ আইনের সংশোধনী সংসদে উত্থাপন করা হবে এবং তা পাস করা হবে।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আনিসুল হক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যকার যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তার (ইমন গিলমোর) সফরে আরও জোরদার হলো। নতুন আঙ্গিকে আমাদের এই সস্পর্ক কাজ করবে।
প্রতিনিধির সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, তার সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, আমরা এ আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী সেপ্টেম্বরেই এ সংশোধনী সংসদে উত্থাপন করা হবে এবং তা পাস করা হবে বলে আশা করছি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী ধরনের সংশোধন আনা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এর জন্য আপনারদের আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি মনে করি আপনাদের পরামর্শ সরকারের কাছে অনেক গুরুত্বপুর্ণ। আমি এটুকু বলতে পারি, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যে সংশোধন হচ্ছে, তাতে আপনারা সবাই খুশি হবেন।
তিনি বলেন, আমরা তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে কথা বলেছি। ডেটা প্রটেকশন আইন নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে একবার আলোচনা করার পর একটি খসড়া করা হয়েছে। এ খসড়া নিয়ে আবারও অংশীজনের সঙ্গে বসা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, তার (ইমন গিলমোর) সঙ্গে আমার শ্রম আইন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি, শ্রমিক ও শ্রম আইন নিয়ে বাংলাদেশে অনেক কাজ হয়েছে এবং বর্তমানেও করছি, আগামীতেও করা হবে। যেটুকু সমস্যা আছে, তা আইএলওর আগামী গভর্নিং বডির মিটিং এ সমাধান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চেয়েছি।
এ সময় জানতে চাইলে– আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না– জবাবে আনিসুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিশেষ কোন আলাপ হয়নি। নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে আমরা যে আইন করেছি সেটা আমি তাকে বলেছি।
গত দুই তিন সপ্তাহ ধরে অনেক পর্যবেক্ষক বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরা এসেছেন, সবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এতে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে কি না, বিষয়টি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কীভাবে দেখছেন- জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, পৃথিবী একটি গ্লোবাল ভিলেজ। এখানে পরস্পর-পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক রাখার জন্য অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। আমি সে আলোকেই দেখছি। আমরা একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। কিন্তু আমাদের যে বন্ধুরা আছে, তারা আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে। আবার অনেক কথা তাদেরও জিজ্ঞেস করতে পারি। কখনো কোথাও যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, সেগুলো দুর করার জন্য এই আলোচনা। সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দুর হচ্ছে বলে মনে করি।
এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বিগ্ন। বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক ও সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আমাকে নিশ্চিত করেছেন, এ আইনটি সংশোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আইনটি প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। প্রকাশ হওয়ার পর আমরা আইনটি বিস্তারিতভাবে পরখ করে দেখব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনকে আমরা সবার আগে স্বাগত জানাতে চাই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবাধিকার। অর্থনৈতিক প্রসঙ্গও পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ পণ্য উৎপাদনে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, তা জানতে ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী।
শ্রম আইন ইস্যুতে ইমন গিলমোর বলেন, আমরা শ্রমিক সংগঠন নিয়ে কথা বলেছি। শ্রমিক সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিনিধি বলেন, আমরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল দুই সপ্তাহের বেশি এখানে ছিল। তারা প্রতিবেদন তৈরি করছে।