সারা বিশ্বজুড়ে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে চলতি বছরের তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে তীব্র গরমে ভুগছে বিশ্ববাসী। এই তীব্র গরমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে দাবানলের ঘটনা। এছাড়াও মানুষের শরীরের জন্যও বাড়ছে ঝুঁকি। তীব্র গরমের এই সময়ে ভুগছে বাংলাদেশও। যদিও এই গরম সহসাই কাটানো সম্ভব নয়, তবে গরমের কারণে হিটস্ট্রোক বা পানিশূন্যতা জাতীয় সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা যেতে পারে সহজ কিছু উপায়ে।
কারা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
তীব্র তাপদাহের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের প্রথমেই রয়েছেন শিশু এবং বয়স্করা। সেই সাথে গৃহহীন মানুষ বা নির্মান শ্রমিকদের মতো যাদেরকে বাইরে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয় তাদের জন্যও এই তাপদাহ খুব ঝুকিপূর্ণ। শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের রোগীসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত লোকেরাও অতিরিক্ত তাপের কারণে স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
দ্য লানসেট নামক একটি মেডিকেল জার্নালের গত বছর প্রকাশিত হওয়া একটি প্রতিবেদন বলছে, প্রতি বছর অতিরিক্ত তাপের কারণে অর্ধ মিলিয়নেরও কম লোক মারা যায়। যদিও এই পরিসংখ্যানে অনেক নিম্ন আয়ের দেশের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যায়। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পূর্বাভাস।
অতিরিক্তি তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা
অতিরিক্ত এই গরমের কারণে সাধারণত শরীর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে পানি এবং লবণ ঘাটতির কারণে এই তাপ ক্লান্তি হয়ে থাকে। এর ফলে বয়স্করা এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, তাপ ক্লান্তি হওয়ার লক্ষণগুলো হলো: মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্ষুধামন্দা, অসুস্থ বোধ করা, অতিরিক্ত ঘাম এবং ফ্যাকাসে ত্বক, দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা পালস রেট বেড়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট) পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া।
অত্যধিক তাপে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। সিডিসির মতে, হিট স্ট্রোক হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত সবচেয়ে সাংঘাতিক অসুস্থতা। হিট স্ট্রোকের সময় শরীরের তাপমাত্রা অল্প সময়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়, শরীর ঘামায় না এবং তাপমাত্রা কমে শরীর ঠান্ডা হয়না। শরীরের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) তা তার বেশি পর্যন্ত বাড়তে পারে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে এর ফলে স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতা বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
সিডিসি এবং এসএইচএসের মতে হিট স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, দ্রুত শ্বাস ফেলা বা শ্বাস নিতে না পারা এবং খিঁচুনি।
তাপ ক্লান্তি এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রচন্ড এই গরমের সময়ে তাপ ক্লান্তি এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো: ঠাণ্ডা পানীয় পান করে হাইড্রেটেড থাকা বিশেষ করে ব্যায়াম করার সময়, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা, হালকা রঙের এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা, ছায়ায় হাঁটা, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, ক্যাপ পরা বা ছাতা ব্যবহার করা, পার্ক করা গাড়িতে শিশু বা পশুপাখিদের না ফেলে রাখা।
গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার উপায়:
গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে-
সূর্যের মুখোমুখি থাকা জানালাগুলো দিনেরবেলা বন্ধ রাখা। রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পর জানালাগুলো খোলা যেতে পারে।
দিনে ঘরের পর্দা টেনে রাখা। তবে উজ্জ্বল রঙের পর্দা ব্যবহার করা উচিত না। কারণ এগুলো বেশি তাপ শোষণ করে।
তাপমাত্রা জানার জন্য বসার ঘরে এবং শোবার রুমে থার্মোমিটার রাখা। বিশ্ব স্বাস্থ্য স্ংস্থার মতে, রুমের তাপমাত্রা দিনেরবেলা ৩২ ডিগ্রী এবং রাতে ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখা উচিত।
অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো বন্ধ রাখা। কারণ এগুলো থেকেও তাপ উতপন্ন হয়।
ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য ইন্ডোর প্লান্ট রাখা। এছাড়াও বাটিতে করে পানি রাখা যেতে পারে। কারণ বাষ্পীভবনের কারণে পরিবেশ ঠান্ডা হয়।
সম্ভব হলে শীতল কোনো রুমে থাকার চেষ্টা করা। বিশেষত ঘুমের সময়।