বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, ‘ আমরা ১৯৯১ সালে অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলাম তা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। সেই রাজনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও সরকার গঠন করা হবে।
সোমবার ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে এবং এর অধীনে চারটি বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ‘কিন্তু যখন তারা (আ.লীগ) বুঝতে পারে যে ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাদের অপকর্মের জন্য জনগণ তাদের ভোট দেবে না, তখন তারা বিচারপতি খায়রুল হকের সহায়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়।’
পরে তিনি বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণ করেছে, ফলে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো কেমন হবে তা এখন নির্দেশ করে। ‘এভাবে তারা আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে।’
টাকা কোথায় গেছে
ফখরুল বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাট ও চুরির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকেও ধ্বংস করেছে। ‘এখানে চুরি ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। সব মেগা প্রকল্পের পিছনে মূল উদ্দেশ্য চুরি। এভাবে তারা পুরো বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ‘আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশকে আবারও দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে হবে এবং জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল দীর্ঘদিন ধরে গর্ব করে আসছিল যে দেশ প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
‘কিন্তু আমরা এখন লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। তাদের জ্বালানি উপদেষ্টা ও আমার শিক্ষক ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, টাকা না থাকায় আমরা কীভাবে বিদ্যুৎ দেব? কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিল যে ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে অর্থের কোনও সংকট নেই। কোথায় গেল সেই টাকা?
বিএনপি নেতা বলেন, তৌফিক-ই-এলাহী ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে অসহায়ভাবে স্বীকার করেছেন যে, তারা দিনে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না, রাতে দেয়া হবে। ‘এটি তাদের উন্নয়নের একটি উদাহরণ এবং এভাবেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে ঐক্য
ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ বারবার বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে এবং তারা আবারও গণতন্ত্র হরণ ও জনগণের অধিকার হরণ করে দেশকে ধ্বংস করছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইনের কারণে মানুষ এখন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। ‘এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা আমাদের গণতন্ত্র, ভোটদান এবং অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। আমরাও চাই সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হোক।
দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবে রূপ দিতে তরুণসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ লুণ্ঠন-দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে জাতির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে ভেস্তে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে জাতি যা হারিয়েছে তা ফিরে পেতে তাদের দল আরেকটি যুদ্ধ শুরু করেছে। ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরে পেতে
চাই। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের জান-মাল সুরক্ষিত থাকবে।’
ফখরুল বলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে প্রথমেই সততা ও সুশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করার পদক্ষেপ নেবেন।