ফরিদপুরের ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু লিংক রেলপথের (ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্ত রেলপথ) জংশন ও রেললাইনের কাজ। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক এ কাজে তদারকি করছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে এখন রেল চলাচলের অপেক্ষায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা। আর সেই লক্ষেই দ্রুত গতিতে এই রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের আশা পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল এ অঞ্চলের যোগযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পরিবর্তন হবে আর্থসামাজিক উন্নয়নের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রড সেট করে বসানো হচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি কংক্রিট স্লিপার। আর দুই পাশে থাকছে স্টিলের রেলপাত। রড, স্লিপার ও পাত স্থাপনের পর দেয়া হচ্ছে ঢালাই।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলো মিটারের ২০টি জংশন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ফরিদপুর অংশে ভাঙ্গা থেকে জাজিরা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এ পথে স্লিপার স্থাপনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এ লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রেল সংযোগকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। আর এই জন্য দিনদিন বাড়তে শুরু করেছে কৃষি জমির দর।
প্রকল্পটি সম্পর্কে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে রেলপথের কাজ। তারা পদ্মা সেতুর মতো আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কারণ রেল সংযোগ হয়ে গেলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে কল-কারখানা। এতে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সর্বোপরি অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তিত হবে।
ভাঙা কলেজের শিক্ষক মিজানুর রহমান ও ব্যবসায়ী শামিম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল উন্নয়নে অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ স্থাপন করে সেই ঘাটতি দূর করে দিচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষ সরকার প্রধানের কাছে ঋণী। তার প্রচেষ্টা না থাকলে এটা হতো না।
ভাঙা উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ রেল যোগাযোগের কারণে মোংলা ও পায়রা বন্দরের পণ্য ভাঙা হয়ে রাজধানীতে সহজেই যেতে পারবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে। বিশ্ব মন্দা ভাবের পরেও ভাঙায় প্রকল্পটির কাজ দ্রুতগুতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয়তো শেষ হবে।’
ফরিদপুর চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে রেল সড়ক চালুর মধ্য দিয়ে ব্যবসা ব্যাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফরিদপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে, এটার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক বিপ্লব ঘটবে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিন্টু হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭২ কিলোমিটারের ২০টি জংশন স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে ফরিদপুর অংশে ভাঙ্গা থেকে জাজিরা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’