নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের মাকে হত্যার ঘটনায় ছেলেসহ ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের প্রত্যেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডিতরা হলেন- সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির (৩২), মিলন মাঝির ছেলে মো. নিরব (২৮), নুর আলমের ছেলে নুর ইসলাম (২৮) প্রকাশ কসাই নুর ইসলাম, দুলাল মাঝির ছেলে আবুল কালাম মামুন (৩০), মো. হারুনের ছেলে মিলাদ হোসেন সুমন (২৮), মারফত উল্যার ছেলে মো. হামিদ (৩৫) ও মমিন উল্যার ছেলে ইসমাইল (৩৫)।
জেলা জজ আদালতের পিপি গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের ধানক্ষেত থেকে গৃহবধূ নুর জাহানের (৫৮) মাথাসহ দুই টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন একই ক্ষেত থেকে মরদেহের আরও তিন টুকরো উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় প্রথমে নিহত নারীর ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে মো. নীরব ও কসাই নুর ইসলাম নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা মামলার বাদী নিজেই জড়িত বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর পুলিশ হুমায়ুনকে প্রধান আসামি করে অন্য একটি মামলা করে। ছেলে হুমায়ুন কবিরসহ মামলার ৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিতে তারা রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয়। ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
মামলা বিবরণে উল্লেখ করা হয়, নিহত নুর জাহানের প্রথম সংসারের ছেলে বেলাল হোসেন ঘটনার বছর খানেক আগে মারা যান। তার রেখে যাওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দ্বিতীয় সংসারের ছেলে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে মায়ের বনিবনা হচ্ছিল না। এর জেরেই মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হুমায়ুন। আর সেই হত্যাকাণ্ডে বন্ধু, প্রতিবেশী ও স্বজনের সহায়তা নেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ অক্টোবর রাতে ওই নারীকে প্রথমে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ পাঁচ টুকরো করে প্রতিবেশী পাওনাদারদের ধানখেতে রেখে আসা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাংস কাটার ধারালো অস্ত্র, বটি, একটি কোদাল ও নারীর পরনে থাকা শাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।