নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, করোনা মহামারি থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একথা জানান।
এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ. একা বাংলাদেশের পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বর্তমান মন্দার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য মজুত করছে বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, পণ্য সরবরাহের পথে কোনো রকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে সরকার তা সহ্য করবে না।
এমএ মান্নান জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের সবাইকে সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খাদ্য-শস্য, অর্থ, বিদ্যুৎ ও পানি সব ক্ষেত্রেই সঞ্চয় করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নও বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে অপচয় রোধ করতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া খাদ্যের অভাব পূরণে উৎপাদন বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পাওয়া একটি প্রকল্পে সরকারি অংশের অর্থ বেশি পরিমাণ চেয়েছেন দক্ষিণ সিটির মেয়র। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটি না দিয়ে বলেছেন প্রকল্পের কাজে গতি বাড়াতে হবে। লোকজনকে বুঝিয়ে ভালো কাজ করে টাকা সাশ্রয় করতে হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ২৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছর একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। ওই সময় খরচ হয়েছিল ১৯ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে একনেকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। কিন্তু এখনো আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো ভালো অবস্থানে আছে। গত তিন মাসে দেশে রেমিট্যান্স গত অর্থবছরের তিন মাসের তুলনায় বেশি এসেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ছিল ১১ শতাংশ। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমদানি কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ৪৫ শতাংশ।
‘সরকারি বিদেশি বিনিয়োগ গত ৩ মাসে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা মতো মুদ্রা সরবরাহ কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৬ শতাশ। বেসরকারি ঋণ প্রবাহ বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের ৩ মাসে ছিল ৮ শতাংশ। পরিকল্পনা মতো, গত ৩ মাসে সরকারি ঋণ প্রবাহ কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।’
মন্ত্রী জানান, আজকের একেনেকের সভায় ৭ হাজার ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪ হাজার ৩৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ২ হাজার ৩৮৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।