গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্নের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মনে করলে যেকোনো জায়গায় বসে নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।
সিইসি বলেন, ‘আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাদের সঙ্গে বসে প্রত্যক্ষ করতে পারতেন। অনেকের বক্তব্য শুনেছি, এটা কী করে সম্ভব হলো অফিসে বসে এতগুলো কেন্দ্র দেখা। সিসিটিভি দেখে রাস্তার নিয়ন্ত্রণও বিভিন্ন দেশে করা হয়। সিস্টেমটাকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে একটা জায়গায় বসে ২০০, ৪০০ জায়গার ফ্যাক্টস সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। আমরা মনে করি, এটা জুতসই একটা প্রযুক্তি।’
গতকাল (বুধবার) ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে ইসি। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর বেলা সোয়া ২টার দিকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রথমে নানা অনিয়মের কারণে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পুরো নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার।
এর পরেই নির্বাচন বন্ধ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তোপের মুখে পড়েন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তোলেন, ঢাকায় বসে সিসিটিভি দেখে ভোট বন্ধ করে দেওয়া কতটা যৌক্তিক।
ইসির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফও। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি। ঢাকায় কমিশন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিল- তা বোধগম্য নয়।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ক্ষমতাসীন দলের ওই প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকায় বসে আপনারা এভাবে কেন্দ্র বন্ধ করতে পারেন কি না— এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আইনের ৯১ ধারায় বলেছে, আমরা যদি মনে করি, কী দিয়ে মনে করলাম, ঢাকায় বসে মনে করব, না কুমিল্লায় বসে করব, না চট্টগ্রামে বসে করব বা আমরা জাহাজে বসে মনে করতে পারি, তা নয়; আমাদের কাছে যদি অনুমিত হয়, নির্বাচনটা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তাহলে নির্বাচন কমিশন যেকোনো কেন্দ্রের বা সব কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে।’
‘বিভ্রান্তিটা এ কারণে হতে পারে, আমি কীভাবে দেখেছি বা আপনারা কীভাবে দেখেছেন। আমি যদি ওদের একজন হতাম, তাহলে আমার কাছে নিশ্চয় এ প্রশ্নই উঠত। কাজেই জিনিসটা পরিষ্কার হওয়া উচিত সবার কাছে যে আমরা দেখেশুনে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং দেখেছি।’
সিইসি গতকাল বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, সদ্যপ্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার এ আসনের ১৪৫ কেন্দ্রের সবগুলোতেই এবার সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। ভোট হচ্ছিল ইভিএমে। ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয় কেন্দ্রের পরিস্থিতি। গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।পরে গোটা নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা আসে।