তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পঞ্চগড়ে সহিংসতার ঘটনা ঢাকা এবং লন্ডন থেকে মনিটরিং করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। শিবিরের বাঁশের কেল্লা ফেসবুক পেজ থেকে উসকানি ছড়ানো হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এবং হারুন অর রশিদের ফেসবুক পেজ থেকে নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই এলাকার বিএনপি জামায়াত নেতারাও ভেতরে ভেতরে উসকানি দিয়েছে। তারা শুধু ওই সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেনি। তারা পুলিশের উপর হামলা করেছে, ট্রাফিক বক্স জ্বালিয়ে দিয়েছে, র্যাবের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ডিসি অফিসে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।
রবিবার (১২ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ দুই যুবক হত্যার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বায়তুল আফিয়্যাত মসজিদের সামনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের উদ্দেশে
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সঙ্গে সংহতি জানাতে আমরা এখানে এসেছি। আপনারা ভয় পাবেন না, আপনাদের সঙ্গে দেশের মানুষ আছে, আমরা আছি, আমাদের দল আছে। বাংলাদেশ তো এখন ডিজিটাল। কে কখন কোথায় ফোন করে, ফোনে কি কথা বলে, কে কাকে কতবার ফোন করেছে, এটা ট্রাক করা তো কঠিন কাজ নয়। আমরা জানি কারা কি করেছে।
এখানে কিছু স্থানীয় মানুষের সঙ্গে বহিরাগতরা অংশ নিয়েছে অভিযোগ তুলে ড. হাছান বলেন, তবে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক তাদের পুলিশ অবশ্যই আইনের আওতায় আনবে। বর্তমানে পুলিশের সেই প্রযুক্তি রয়েছে। মাটির নিচ থেকে হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি বলেন, রাজাকারের উত্তরসূরীরা পঞ্চগড়ে জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, লুটপাট করেছে। ইসলাম কখনো, রসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ইসলামের নামে অন্যের ঘরবাড়ি জ্বালানোর কথা বলেনি। মানুষ হত্যার করার কথা বলেনি। ধর্মের নামে লুতরাজের কথা বলেনি। যারা এসব করেছে, তারা ইসলামের শত্রু। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা যেমন ইসলাম রক্ষার নামে মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করেছিল, ইসলাম রক্ষার কথা বলে মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছিল। এখানেও তাই করা হয়েছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান আহমদ তবশীর চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন সময় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, পঞ্চগড় পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুনসহ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত শুক্রবার পঞ্চগড়ের আহমদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদ সমর্থক মুসল্লিরা বিক্ষোভ করেন। তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পঞ্চগড়। সংঘর্ষে মারা যান দুই যুবক।