পুলিশ আটকের পর থানায় রাখা সাবেক যুবদল নেতা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এ অবস্থায়ও পুলিশ কোনো ওষুধ খেতে দেয়নি। এতে তিনি মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। সোমবার দুপুর ২টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানায় এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া আকরাম হোসেন (৪০) হরিপুর উপজেলার হাটপুকুর গ্রামের আবদুল তোয়াবের ছেলে। তিনি হরিপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক নেতা ছিলেন।
আকরামের চাচাতো ভাই আশির উদ্দীন বলেন, রোববার রাতে আটকের পর থানায় একটি কক্ষে বেশ কয়েকজনকে এক সঙ্গে রাখা হয়েছিল। ভ্যাপসা গরমে আকরামের ক্ষতি হতে পারে। সে অসুস্থ ব্যক্তি, হৃদরোগের সমস্যা আছে পুলিশকে একথা জানানোর পরেও তাকে ওষুধ খেতে দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আদালতে পাঠানোর ক্ষেত্রেও পুলিশ কালক্ষেপণ করেছে। পুলিশের গাফিলাতির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
আকরামের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার জানান, তারাবির নামাজের পর খবর পান স্বামীসহ ছয়জনকে থানায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কী কারণে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জানতে থানায় যান তিনি। পুলিশ মাদকের কথা বললে তার কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়।
ফাতেমার দাবি, তার স্বামী মাদক সেবন করতেন না এবং তার নামে কোনো মাদক মামলাও নেই। এদিন ঘটনার পর থেকে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েন স্থানীয় জনগণ। পুলিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় স্থানীয় জনতার।
এ বিষয়ে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মাদক মামলার এক নম্বর আসামি আকরাম হোসেনকে পুলিশ স্কট-এর মাধ্যমে হরিপুর থানা থেকে আদালতে পাঠানোর সময় অসুস্থ বোধ করেন। তাৎক্ষণিক তাকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়; সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’
চিকিৎসকের বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকরাম মারা গেছেন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. শামীমুজ্জামান বলেন, আকরামকে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ৫ মিনিট কর্তব্যরত চিকিৎসক তার প্রাথমিক চিকিৎসা করে বুঝতে পারেন তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব না।
মৃত ব্যক্তির দেহে আঘাতের কোন চিহ্ন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি ময়নাতদন্ত ছাড়া বলার সুযোগ নাই। পুলিশ সুরতহাল করলে তারা বলতে পারবেন।
বিএনপির দাবি, আটকের পর রাতভর নির্যাতন করে সাবেক এই যুবদল নেতাকে হত্যা করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় দলীয় প্যাডে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।