ধারণা করা হচ্ছে কক্সবাজারের বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) জনসভা জনসমুদ্র পরিণত হবে। এটি হবে সর্বকালের বৃহৎ জনসভা।
জেলার প্রতিটি মানুষ উৎসুক হয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য। কারণ কক্সবাজারবাসীকে শেখ হাসিনা যা দিয়েছেন তা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। গৃহহীনরা পেয়েছেন ঘর, ভূমিহীনরা পেয়েছেন জমি, বাস্তুচ্যুত পেয়েছেন ঘরবাড়ি, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই উপকৃত হয়েছেন। তাই দরদী ও উপকারী বন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কক্সবাজারের প্রতিটি মানুষ জনসভায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার আগমন ও জেলা আওয়ামীলীগের জনসভার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। এসময় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক (এমপি) জাফর আলম (এমপি),প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন, হাসান জাহিদ তুষার,সহকারি প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস সহ জেলা আওয়ামীলীগের নেতার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। সেদিন কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে পুরো শহর জনসভায় পরিণত হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। সাড়ে ৫ বছর পর কক্সবাজার আসছেন।
এ নিয়ে গেলো ১৪ বছরের ৯ বার কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার সফরকালে ২৮ টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪ টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশা
প্রধানমন্ত্রী আগমনকে ঘিরে আশায় বুক বেধেছেন কক্সবাজারবাসী।
এবারের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কক্সবাজারবাসীর কতৃজ্ঞতা প্রকাশের অপূর্ব সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক, পেশাজীবী সহ সচেতন মহল।
তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের সময় কক্সবাজারের সার্বিক চিত্র বদলে যাচ্ছে। এখানে ২৭ টি মেগা প্রকল্প সহ তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এসপিএম প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্র বন্দর সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চলছে। সরকারের সময়ে জেলাবাসি পেয়েছেন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্প, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বিকেএসপি সহ জেলা-উপজেলার গ্রামে গ্রামে নানা উন্নয়ন। এসব উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জেলাবাসি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানানো সুযোগ ৭ ডিসেম্বর।
আর এই কতৃজ্ঞতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও ১০ দাবি জানানোর পক্ষে জোরালো অভিমত প্রকাশ করেছেন সকলেই। রাজনৈতিক, পেশাজীবীসহ সচেতন মহল অভিমত, কক্সবাজারের উন্নয়ন শুধু কক্সবাজার নয়, পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবেও গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। আর সমুদ্র শহর কক্সবাজার হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক একটি পয়েন্টে।
ফলে এখানো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার সহ আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র করতে বিশেষ নীতি ঘোষণা, পর্যটন বান্ধব শহর রক্ষা বাঁধ, সামুদ্রিক অর্থনীতির স্বচ্ছ ঘোষণা, কক্সবাজার-মহেশখালীর সাথে সেতু সংযোগ, মাতামুহুরি উপজেলা গঠণ, লবণ বোর্ড গঠণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের কোঠা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু ও রোহিঙ্গা সংকট নিরসন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দাবি উঠেছে। যে ১০ টি দাবির পক্ষে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে জোরালোভাবে।
এ উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে এবং তার মুখে আগামীর বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কক্সবাজারব্সী।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন জানান, প্রকৃতিগতভাবে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজার। এখানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে আরও ব্যাপক পরিচয় লাভ করেছে। একটি আধুনিক পর্যটন শহর করতে এখানে প্রযুক্তি নির্ভর মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। এখানে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় কক্সবাজারের সন্তানদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে। অথচ উন্নয়নের এ মহাযজ্ঞে এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিনের দাবি। বেসরকারিভাবে একটা থাকলেও তার গুরুত্ব কম। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করছে জেলার তরুণ সমাজ।
কক্সবাজার সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম জানান, সাগরের কিনারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশে নয়; আন্তর্জাতিক মহলেও গুরুত্ব পাবে অনেক বেশি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার জানান, জেলাবাসি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কর্তৃপক্ষের কোন শেষ নেই। মেগা প্রকল্পের কারণে এ জেলা দেশের না আন্তর্জাতিক একটি পয়েন্ট। এখানে মহেশখালীতে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তার জন্য কক্সবাজার জেলা শহরের সাথে মহেশখালীর যোগাযোগ সহজ করা জরুরী। এর জন্য মহেশখালীর সাথে কক্সবাজারের সেতু সংযোগের দাবি উঠেছে।
তিনি সমুদ্র বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, সমুদ্র বিজয় আমাদের সামুদ্রিক নীল অর্থনীতির বিশাল হাতছানি দিচ্ছে। এ অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ঘোষণা বা পরিকল্পনা ৭ ডিসেম্বর জানাবেন। একই সঙ্গে সম্ভাবনার পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার সহ বিনোদন কেন্দ্র জরুরি হয়ে উঠেছে। যেখানে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের থিয়েটার প্রদর্শনী সহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের বিনোদনের নানা মাধ্যম। এতে পর্যটন শহরের গুরুত্ব বাড়বে আরও অনেক বেশি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের মহাযজ্ঞে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবসায়ীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা যেন বিশেষ একটি কোটা পান আর নিরাপদে ব্যবসা করতে পারেন তার দাবি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।