বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে আগামী ২৪ জুলাইয়ে মধ্যে নতুন বইপত্র সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সোমবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অ্যাসেসমেন্ট করেছি, কতজন শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে বা হারিয়ে গেছে। সেই অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বইগুলো নিয়ে এসে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। এসএসসি ছাড়াও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা যারা আছে, তাদের হাতেও বই পৌঁছে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে যে লার্নিং গ্যাপটা হয়েছে, সেটা পূরণের জন্য আমরা গবেষণা করে বের করেছি যে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। সেটার পূর্ণ একটা পরিকল্পনা করে রেমেডিয়াল ক্লাসের পরিকল্পনা হয়তো আমরা এক সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে প্রকাশ করবো। তেমনি পরীক্ষার্থী যারা, বিশেষ করে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পরীক্ষার্থী যারা, তারা একটু হয়তো পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা সহযোগিতা করলে তাদের সুবিধা হবে।
দীপু মনি বলেন, ‘সিলেটের নেতৃবৃন্দের কাছে শুনলাম প্রায় ১২০ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। হঠাৎ করেই হয়েছে (বন্যা)। বহু কিছু, বহু সম্পদ রক্ষা করা যায়নি। এই বন্যার মধ্যে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ রাখতে হয়েছে, আমাদের পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখানে আমাদের শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন, তারা সেগুলোর (ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের) একটা অ্যাসেসমেন্ট করে আমাদের কাছে দ্রুত পাঠাবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা চেষ্টা করবো ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজ করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে, তবে এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবাই আশা করছেন, তারা দ্রুত ফিরে যাবেন (নিজেদের বাড়িতে)। আমরা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারি, সেটার চেষ্টা করতে হবে। তার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়ন, আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি অর্জন করতে হলে এর মূল হাতিয়ার কিন্তু শিক্ষা। আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যতো চ্যালেঞ্জ আছে, যতো সম্ভাবনা আছে, এসব মোকাবিলা করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষাই মূল হাতিয়ার। আমরা কিন্তু এখন আর শিক্ষায় আধুনিকায়ন, পরিবর্তন বা সংস্কার করতে বলছি না। এখন আমরা বলছি একেবারে রূপান্তর ঘটাতে হবে, ট্রান্সফরমেশন হতে হবে। শুধু চেইঞ্জ বা রিফর্ম না। সেজন্য আমরা নতুন কারিকুলাম করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ৬২টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামের পাইলটিং চলছে। এর মধ্যে সিলেটের তিনটি প্রতিষ্ঠান আছে।’
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করার আশ্বাস প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এছাড়াও সভায় বন্যাপরবর্তী সময়ে সিলেট জেলার শিক্ষা কার্যক্রম, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা, এসএসসি’র নতুন পাঠ্যক্রম, এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি) সিলেটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার এবং এ বিভাগের চার জেলার শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।