ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নম্বর জালিয়াতি, খাতা পুনর্মূল্যায়নে অনীহা, মানসিক নির্যাতন,অপদস্থ করার, সেমিস্টারের পূর্বে ইন্টারনাল নম্বর না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বাংলা বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম নামের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মিনহাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে এই লিখিত অভিযোগ দেন। ১০ ও ১৩ ডিসেম্বর পৃথক দুটি অভিযোগ প্রদান করেন৷ তবে ওই শিক্ষকেরা এ ধরনের অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি৷ বর্তমান উপাচার্য (রু.দা) ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করেছে শুনেছি৷’
মিনহাজুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শুরু থেকে তাঁর বিভাগে বিভাগীয় প্রধান উন্মেষ রয়, সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার এবং সহকারী অধ্যাপক কুমার সরকার এবং সহকারী অধ্যাপক পম্পা রানী মজুমদার তাঁকে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছেন। তৃতীয় বর্ষে মিনহাজুলকে একটি বিষয়ে ফেল করানো হয় এবং তিনটি কোর্সের অভ্যন্তরীণ নম্বর কম দেওয়া হয়।
তিনি এ অবস্থায় বিভাগীয় প্রধান উন্মেষ রয়ের কাছে খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুললে তাতে রাজি হননি তিনি৷ ইন্টারনাল মার্ক ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বে দেওয়ার কথা কিন্তু সেই নিয়ম মানেননি এসব শিক্ষকেরা৷
ঐ শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, উন্মেষ রয় এবং পম্পা মজুমদারের সিন্ডিকেট ইন্টার্নাল মার্ক নম্বর গোপন করেন৷ ফাইনাল পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলে ইন্টার্নাল নম্বর কমিয়ে দেন। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় সঞ্জয় সরকারের কোর্সে অনুবাদের বিশ্বসাহিত্যে-১ কোর্সে ৬০ নম্বরে ৩৭ পায়৷ কিন্তু পরে ইন্টার্নাল নম্বর দেখি ১৫.৫০ । আবার উন্মেষ রয় বাংলাদেশের ছোটগল্প কোর্সে ফাইনাল পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের মধ্যে ১৪.৫০ দিয়ে ফেল করিয়ে দেন৷
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার বিধির ৮ এর ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি কোর্স শিক্ষক ইন্টারনাল মার্ক মূল্যায়ন সেমিষ্টার বা বর্ষপূর্তি পরীক্ষা শুরুর পূর্বে নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে শিক্ষার্থীকে জানানোর বিধান রয়েছে৷ কিন্তু অভিযুক্ত ওই শিক্ষকেরা কেউ এই আইন মানে না৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নম্বর জালিয়াতির ঘটনার অভিযোগ নতুন নয়, তারা সিন্ডিকেট করে এগুলো করে থাকে৷ কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে ফেল করিয়ে দেওয়া ও ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি দেওয়া হয়৷ এজন্য ভয়ে কেউ মুখ খোলে না৷
প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের ১ আগস্ট মিনহাজুলের জ্যেষ্ঠ ভাই ও বিভাগের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান নম্বর জালিয়াতি ও এম্বুলেন্স কেড়ে নিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ এনেছিলেন উন্মেষ রয়ের বিরুদ্ধে৷
এছাড়াও ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে ধর্মীয় উস্কানী ও ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করে কুরুচিপূর্ণ পোষ্ট করেন উন্মেষ রয় ও সঞ্জয় সরকার৷ সে সময় তৎকালীন উপাচার্য বরবার ৩৯ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। কিন্তু ইতিপূর্বের এসব বিষয় নিয়ে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তৎকালীন প্রশাসনকে৷
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পম্পা রানী মজুমদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না৷
ববির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উন্মেষ রয় বলেন, ‘আমিও চাই বিষয়টি তদন্ত হোক৷ আসলে কেন সে ওই কোর্সে ফেল করলো সেটা সকলের জানা দরকার৷ মূলত এসব অভিযোগের কারণ গত ৭ তারিখে আমি তার নামে মিডটার্ম পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি৷’
ইন্টারনাল নম্বর পরীক্ষার আগে কেন দেওয়া হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি৷’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঐ অনুষদের ডিনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷