বিশ্বব্যাপী প্রধান ফসলের ঘাটতির মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময়ে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সিঙ্গাপুরভিত্তিক কৃষি পণ্য-বাণিজ্য কোম্পানি অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশলান প্রাইভেট লিমিটেড ৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশের গম ও ডালের একটি প্রধান সরবরাহকারী।
আইএফসি অনুসারে, উদীয়মান বাজারে বেসরকারি খাতের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা বৃহত্তম বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান একটি আট বছরের অর্থায়ন প্যাকেজ প্রদান করছে। যার মধ্যে ১৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উচ্চ সুরক্ষিত ঋণের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাইভেট সেক্টর উইন্ডো ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি থেকে ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়নের রেয়াতি ঋণ রয়েছে।
আইএফসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এমন সময়ে যখন মূল্য অস্থিতিশীলতার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অর্থায়ন সীমাবদ্ধ, তখন বিনিয়োগটি অ্যাগ্রোকর্পকে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে উচ্চতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সময়ে দেশে নিরাপদ, পুষ্টিকর ও ক্যালরি সমৃদ্ধ প্রধান খাদ্য সরবরাহ করতে বাংলাদেশে লাখ লাখ টন গম ও ডাল কিনতে এবং সরবরাহ করার অনুমতি দেবে। এই প্রধান খাবারগুলো মিলের মালিক ও খাদ্য প্রক্রিয়াজারকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়, যারা বাংলাদেশি জনসংখ্যার জন্য মৌলিক খাবার তৈরি করতে তাদের ওপর নির্ভর করে।
অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় আয়েঙ্গার বলেন, ‘অ্যাগ্রোকর্প এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বৈশ্বিক খাদ্য-সাপ্লাই চেইনের সাম্প্রতিক সব ধাক্কার কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই ঋণের জন্য আইএফসি’র সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে পেরে আনন্দিত, যা আমাদেরকে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান বাজারগুলোর জন্য খাদ্য সরবরাহকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে আরও শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম প্রদানে নিজেদের কাজকে ত্বরান্বিত করবে।’
এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিওফ্রে ইয়ো বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট যে আইএফসি অ্যাগ্রোকর্পকে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ চেইনে এর অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং এই পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশের বাজারগুলোকে পরিবেশন করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের ভূমিকা অ্যাগ্রোকর্পের মতো কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করেছে।’
ইউক্রেনে যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলেছে, উচ্চ ও অস্থির শক্তি এবং সারের দাম ও বিধিনিষেধমূলক বাণিজ্য নীতিকে উদ্রেক করেছে এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট সাপ্লাই-চেইন ব্যাঘাতকে আরও খারাপ করেছে।
বিশেষভাবে গম প্রভাবিত হয়েছে। কারণ ইউক্রেন ও রাশিয়া ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্ব-বাণিজ্যের এক চতুর্থাংশের বেশি এ ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
এছাড়াও বাংলাদেশের ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপদের ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন।
সংকটের এই সংমিশ্রণ আরও বেশি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত করবে, ক্ষুধা ও অপুষ্টিকে বাড়িয়ে দেবে এবং দেশে কঠোরভাবে অর্জিত উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।
আইএফসি’র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেক্টর গোমেজ অ্যাং বলেন, ‘এই বিনিয়োগ বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। যাতে নিরাপদ, পুষ্টিকর ও ক্যালরি-সমৃদ্ধ প্রধান খাদ্যের সহজলভ্যতা সম্ভব হয়।’
আইএফসি’র এই বিনিয়োগ নতুন ছয় বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্মের (জিএফএসপি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যার লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তার অবনতি, বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে মোকাবিলা করার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে একত্রিত করা।
২০১০ সাল থেকে আইএফসি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য তিন দশমিক ৬ বিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে।