আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নকে একটি শঙ্কা হিসেবে দেখা উচিত যে বাংলাদেশে নির্বাচন গণতান্ত্রিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে অঙ্গীকার করছে। যদিও তারা স্বৈরাচারী আচরণ এবং নিন্দনীয় আক্রমণ চালিয়েছে যা স্পষ্টভাবে সরকারের অঙ্গীকারের বিপরীত।
বুধবার (০২ আগস্ট) সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জুলাইয়ের শেষের দিকে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ এবং বিরোধী দলের সমর্থকদের লাঠিপেটা করেছে। ২৯ জুলাই একটি বড় বিক্ষোভের আগের দিনগুলোতে কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৮০০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করে তাদের থামানোর নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর ও বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আসা ইইউ প্রতিনিধিদলের সফরের সময়ও নির্বাচন বিষয়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা-নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ জানায়, বিক্ষোভে দলটির অন্তত শতাধিক সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ এবং বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র লোকদের লাথি ও আঘাত করে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। আর পুলিশের মতে, বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে এবং পুলিশের গাড়িতে হামলায় তাদের অন্তত ৩২ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
এদিকে ২৯ জুলাই সমাবেশের জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে এইচআরডব্লিউর মতে, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার এবং বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে মানবাধিকারের মানদণ্ডকে সম্মান করতে হবে। সংস্থাটি বলছে, বিক্ষোভ যাই হোক না কেন, আইনগতভাবে তা অনুমোদিত ছিল।
এছাড়া বিক্ষোভে পুলিশকে অহিংস উপায় মেনে চলতে পরামর্শ দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলছে, এক্ষেত্রে কর্মকর্তারা জাতিসংঘের মৌলিক নীতিগুলো যেমন বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার আগে এলাকা খালি করার মতো কার্যক্রম অনুসরণ করতে পারে। জাতিসংঘের নির্দেশ মতে, বিক্ষোভে কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বা জনসাধারণের একজনের ক্ষতির আসন্ন হুমকি মোকাবিলায় রাবার বুলেট শেষ অবলম্বন হিসাবে ব্যবহার করা উচিত। আর শুধু জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি হবে এমন পরিস্থিতিতে জলকামানগুলো ব্যবহার করা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গত ২৯ জুলাই বিএনপির সমাবেশের আগের সপ্তাহগুলোতে দেড় হাজারের বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিপুল সংখ্যক ‘অজ্ঞাত’ লোকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ ব্যবহার করা বাংলাদেশে একটি সাধারণ অপমানজনক অভ্যাস।
এইচআরডব্লিউ এর মতে, এর মাধ্যমে পুলিশকে কাউকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিতে এবং হুমকি দেওয়ার অনুমতি দেয়, মামলার অভিযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও বন্দীদের বারবার পুনরায় গ্রেপ্তার করতে দেয় এবং জামিনের আবেদনগুলো ব্যর্থ করে দেয়।
বিগত মাসগুলোতে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক বিরোধী সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালানোর জন্য এই উন্মুক্ত মামলাগুলো ওয়ারেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছেন। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১২ জুনের মধ্যে নেতা-কর্মী ও সমর্থক ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে ৪০ লাখের বেশি মামলা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো বলছে, যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তাই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বল প্রয়োগের নিয়ম মেনে চলার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া এবং যারা এই মান লঙ্ঘন করবে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি।
এদিকে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি তার বক্তব্যে আরও বলেছেন, গণহারে ও নির্বিচারে গ্রেফতার এবং সহিংস দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধীদের অক্ষম করে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন চিন্তায় কাউকে বোকা বানাতে পারবে না সরকার।