বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জনরা বুধবার রাতে সফলভাবে মৃত নারীর শরীর থেকে পৃথক দুই রোগীর শরীরে প্রথমবারের মতো কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
বৃহস্পতিবার ডা. মিলন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ২০ বছর বয়সী সারা ইসলামের কাছ থেকে কিডনি নেয়া হয়। এর আগে বুধবার বিকালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে তার মা অপারেশনের সম্মতি দেন।
যাকে আগে বুধবার বিকেলে ক্লিনিক্যালি মৃত ঘোষণা করা হয়, পরে তার মা অপারেশনের জন্য তার সম্মতি দেন।
ভিসি বলেন, বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে সার্জনদের একটি দল বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা কিডনি প্রতিস্থাপনের অপারেশন করেন।
তিনি বলেন, অ্যানেস্থেশিয়া, অ্যানালজেসিয়া ও ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহযোগিতায় অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিডনি দাতা সারাহকে চার দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যখন কিডনি গ্রহীতা দুই নারী অস্ত্রোপচারে পরে সুস্থ হয়ে উঠেন।
কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিএসএমএমইউ এবং ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনে পৃথক অস্ত্রোপচার করা হয়।
কিডনি গ্রহীতাদের একজন মিরপুরের ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তার এবং আরেকজন কিডনি ফাউন্ডেশনের রোগী। এ ছাড়া দাতার কর্নিয়া সফলভাবে চক্ষু রোগীদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ভিসি বলেন, আইসিইউ রোগীদের যাদের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে ব্রেন-ডেথ বলা হয় এবং যাদের জীবন ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না তাদের ক্ষেত্রে ক্যাডেভারিক। ক্যাডেভারিক রোগীরা তাদের অঙ্গ দান করতে পারেন যদি না তারা ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, এইচআইভি ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হন।
আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের আগে বিএসএমএমইউ কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে সারার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদুল ইসলাম ও শিক্ষিকা শবনম সুলতানার বড় সন্তান সারা ছিলেন বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
যখন তার বয়স মাত্র ১০ মাস ছিল তখন তিনি অপরিবর্তনীয় যক্ষ্মা স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হন।
সারা দেশে ক্যাডেভারিক কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রথম অঙ্গ দাতা হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। তার সাহস তাকে মৃত মানুষকে অঙ্গ দান করতে উৎসাহিত করেছে। ক্যাডেভারিক রোগীদের অঙ্গ দানের মাধ্যমে অনেককে স্বাভাবিক জীবনে আনা সম্ভব।
অপারেশন সফল হওয়ার জন্য ভিসি অপারেশন প্রধান ডা. দুলাল ও তার দলকে ধন্যবাদ জানান।
অপারেশনে অংশ নেন ডা. মো. সাইফুল হোসেন ধিপু, ডা. ফারুক হোসেন, ডা. কার্তিক চন্দ্র ঘোষ, ডা. দেবাশিস বনিক, ডা. দেবব্রত বণিক, ডা. দিলীপ ভৌমিক ও ডা. মো. আশরাফুজ্জামান।