রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘাতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধভাবে পুকুর খনন। পুকুর খননকারী ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। ফলে নির্বিঘ্নেই চলছে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন-রাত সমানতালে চলছে পুকুর খননের কাজ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি অবৈধ পুকুর খননের খবরে ইতোমধ্যে অনেক এলাকাতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এরপরও বাঘা উপজেলা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালালে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন করছে অসাধু ব্যক্তিরা। অতি মুনাফালোভী ব্যক্তিদের এমন কর্মকাণ্ডে পরিবেশের চরম ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
উপজেলার বাঘা পৌরসভাধীনসহ মনিগ্রাম,বাউসা ও বাজুবাঘা ইউনিয়নের প্রায় ৭০-৮০ বিঘা জমিতে গত কয়েক মাস ধরেই ধানী, আমবাগান ও তিনফসলী জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করলেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন।
ফলে এসব এলাকায় এখন ধানী জমি কমে যাচ্ছে দিন দিন। যেটুকু জমি পুকুরের বাইরে আছে তা এখন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনাবাদি পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
বর্তমানে বাঘা উপজেলায় পুকুর খনন চলছে পৌরসভাধীন ২ নং ওয়ার্ডের পাকুড়িয়া ও ৮ নং ওয়ার্ডের চাকিপাড়া মাঠে, বাউসা ইউনিয়নের হরিনাম,আড়পাড়া,বলিহার আমবাগান ও ধানী মাঠে। বাজুবাঘা ইউনিয়নের বারখাদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটু দক্ষিণে ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের বলিহার বড় হিন্দুপাড়া মাঠে সমতল ধানী তিনফসলী জমি কেটে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। আর এসব পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে সেসব রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে পাকারাস্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজুবাঘা এক ইউপি সদস্য্য বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। তা ছাড়া সমতল ধানী জমি এভাবে কেটে পুকুর খনন নিষিদ্ধ হলেও একটি সিন্ডিকেট সমতল জমিতে পুকুর খনন করছে। এতে করে পুকুর খননকারীরা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে আশপাশের জমির মালিকরা। তাছাড়া কয়েক বছর আগে বানানো রাস্তাগুলো অধিক ভারের কারণে ভেঙে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জুয়েল বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন নিষিদ্ধ। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ পুকুর খননকাজ করলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঘা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুয়েল আহমেদ বলেন,উপজেলার যেকোন এলাকায় পুকুর খননের মৌখিক মোবাইলে বা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ইউএনও স্যারের পরামর্শে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করি। ঘটনার স্থানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় না। তবে অবৈধ ভাবে পুকুর খননের কাজে ব্যবহিত অনেক ভেকুর ব্যাটারী জ্বব্দ করে নিয়ে আসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ পুকুর খনন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার পরেও যেসব এলাকায় পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেসব এলাকায় ইতোমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছে। আমার উপজেলায় কাউকে কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। তার পরেও কোনো তথ্য পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।