আগামীতে বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে দেশ অনেক সমৃদ্ধ হবে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোনো লোক বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার করুক এটা আমরা চাই না। আওয়ামী লীগ সরকার এটা চায় না। কেউ কেউ বিদেশে গত ১৫ বছর থেকে খুব ধুমধামে আছেন। এটা কেমনে সম্ভব। নিশ্চই টাকা-পয়সা নিয়ে গেছেন।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন সকালে নিজের নির্বাচনি এলাকা সিলেটে দুই দিনের সফরে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকালে সিলেট পৌঁছেই প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন এলজিইডির আওতায় ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি দল ও তাদের প্রবাসী সহযোগীরা বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত মাতামাতি হচ্ছে। তারা জনগণের কাছে না গিয়ে শুধু বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়। তারা জনগণের কাছে আসে না। তারা হচ্ছে নালিশ পার্টি।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের সফরকে বাংলাদেশের জন্য সুখবর বলেন তিনি। তিনি প্রত্যাশা করেন, এ সফরে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ভাঙবে তাদের। আর বাড়তে পারে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর হবে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চান দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের সেবা করতে চায়। আওয়ামী লীগ আছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে। এ স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে বার বার আওয়ামী লীগ সরকার দরকার।
বোমাবাজি ও সন্ত্রাসের দেশ না চাইলে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় না থাকাকালে পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশ প্রথম হয়েছে। একদিনে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। সরকারের মদতে বিরোধী দলের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আসছে মূলত রোহিঙ্গাদের জন্য। মানবিক কারণে তারা রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেয়, যেটা বাংলাদেশ সরকারকে নয় বিভিন্ন সংস্থাকে। সেসব সহায়তা ঠিকমতো ব্যয় হচ্ছে কিনা, কেউ চুরি করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে। কারণ যারা আসছে তারা মূলত অর্থ ছাড় কমিটির সদস্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়াতে বলেছে, তারা পর্যবেক্ষণ করে গেলে হয়তো সেই সহায়তা আরও বাড়বে। এজন্য তাদের এ সফর রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো।
আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকাতে ৪৩৫ জন কংগ্রেসম্যান আছে তারা তো সারা দুনিয়া বেড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তারা বাংলাদেশেও আসবে। আসুক, তারা আসলে তো ভালো। এসে আমাদের দেশে দেখে যাক। তাদের তো ধারণা বাংলাদেশ একটি দরিদ্র, সাইক্লোনপিস্ট গরিব দেশ; কিন্তু এসে দেখবে এ দেশ তো এত গরিব না। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। এটা সুখবর।
তিনি বলেন, তাদের কাছে এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশে দিনে রাতে রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকে, মারামারি কাটাকাটি চলছে। আমদের বিরোধী দল ও কিছু প্রবাসী তাদের ধারণা দিয়ে যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু ধর্মের লোকজন প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে নির্যাতনের কারণে। কিন্তু আসলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক আরও ১০ লাখ বেড়েছে। এছাড়া বিরোধী দলের তথ্যমতে তারা জেনেছেন- খ্রিস্টান সম্প্রদায় নাকি বাংলাদেশে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তো তারা আসুক, দেখুক তারা বিরোধী দলের কাছে যা শুনেছে তা সত্যি কিনা। এটা আমাদের জন্য ভালো, তাদের ভুল ভাঙবে।
এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হলেও শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের এত আগ্রহ কেন- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এত কথা বলার সুযোগ তৈরি করেছেন আপনারা।
তিনি বলেন, আমার জানামতে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৬৭টি দেশে নির্বাচন হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেসব নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কথা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের বিরোধী দল সব সময়ই বিদেশিদের কাছে নালিশ করে আসছে, তারা জনসাধারণের কাছে যেতে পারে না। তারা নালিশ পার্টি হয়ে গেছে। এছাড়া কিছু প্রবাসী আছেন তারাও বিদেশিদের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা নালিশ করে থাকেন- সে কারণেই এত কথা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভালো দিক হলো ভূ-অবস্থানজনিত কারণে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বড়লোকের দেশগুলো চীনের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না। আর ভূ-অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টানাটানি করছে; কিন্তু আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব। শেখ হাসিনা থাকলে কোনো সমস্যা নেই।
সিলেট সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন