বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানিতে সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সই করা বিদ্যমান চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করতে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে সরকার।কমিটির নেতৃত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ২৩ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
বিদ্যুৎ সচিব ছাড়াও কমিটিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন; বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ উৎপাদন), বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন), যারা কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে অবহিত করে অভ্যন্তরীণ অফিস আদেশ জারি করেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, কয়লাভিত্তিক ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সই করা ‘ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির’ কারণে বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৭০০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানুয়ারিতে ইউএনবির একটি প্রতিবেদনের পর পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, বিপিডিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কয়লার মূল্য ‘পাস-থ্রু’ হবে যার অর্থ বাংলাদেশকে কয়লা আমদানির জন্য বাজার মূল্য পরিশোধ করতে হবে, কোনো মূল্যসীমা বা ছাড়ের বিধান ছাড়াই।
আদানি পাওয়ার সম্প্রতি বিপিডিবি বরাবর ডিমান্ড নোট ইস্যু করার জন্য একটি অনুরোধ পাঠিয়েছে, যেখানে কয়লার দাম প্রতি মেট্রিক টন ৪০০ ডলার উদ্ধৃত করা হয়েছে যা বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেক বেশি। বিপিডিবি কর্মকর্তারা মনে করেন যে এটি বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারের আলোকে দেয়া উচিত।
বিপিডিবি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে, তারা যে কয়লার মূল্য উদ্ধৃত করেছে প্রতি মেট্রিকটন ৪০০ মার্কিন ডলার তা খুবই বেশি।এটি ২৫০ মার্কিন ডলারের কম হওয়া উচিত। যা আমাদের অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কয়লা আমদানির জন্য পরিশোধ করছি।’
ঝাড়খন্ডের এক হজার ৬০০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত কয়লা আমদানির জন্য এলসি (ভারতে) খোলার বিষয়ে প্রাপ্ত অনুরোধের পরে বিদ্যমান পিপিএ সংশোধন করতে আদানি গ্রুপকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিপিডিবি ।
প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল আদানি প্ল্যান্টে সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে বিপিডিবি ২৩ জানুয়ারি চিঠিটি পাঠিয়েছে। সফরকালে ‘আলোচনার সময় আপনার পক্ষও মতামত দিয়েছে যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে কয়লা সমন্বয়/পরিবর্তন করে কয়লার দামের এই অসঙ্গতি কমাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।’
অফিসিয়াল সূত্র জানিয়েছে যে পর্যালোচনা কমিটির শর্তাবলীতে উল্লেখ করেছে যে এটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার জন্য আইপিপিগুলোর সঙ্গে কয়লা সরবরাহ চুক্তি (সিএসএ)
এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) এর কয়লা মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে এবং কয়লা মূল্য সূচকও কয়লা সরবরাহকারী দেশ পর্যালোচনা করবে।