এস এম সাইফুল ইসলাম:দেশের আনাচে কানাচে শীতের শুরু থেকেই চলতে থাকে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন। পুরো শীতজুড়েই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এটি ধর্মীয় রীতিনীতির চর্চার একটি বড় জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়েই আসছে। আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে জারি রয়েছে এই ঐতিহ্য। ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনগণের মধ্যে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে, সেই সাথে তরুণ সমাজও আগ্রহী হয়ে উঠেছে আয়োজনে।
এই ক্ষেত্রেই কতিপয় বক্তাদের কিছু কর্মকাণ্ড যেমনটা নষ্ট হয় ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট ঠিক তেমনি কখনো কখনো মাহফিল কমিটিও সুযোগ পেয়ে জুলুম করেন বক্তাদের উপর। তবুও দ্বীনের রক্ষক হিসেবে একজন আলেমকে ইসলামের সৌন্দর্য জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ব কর্তব্যও বটে। তবে বাস্তবতায় কোথাও কোথাও ঘটে যায় ঠিক উল্টো, দ্বীন প্রচারের নামে তথাকথিত বক্তা উপাধি নিয়ে আচরণ করেন ঠিক উল্টো; যেই শিক্ষা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়ে যাননি।
কুমিল্লার লাঙ্গলকোটে এক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে বিশেষ বক্তার আলোচনা ২০ মিনিট অতিরিক্ত হওয়ায় ওয়াজ না করেই চলে গেছেন প্রধান বক্তা। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে জনরোষের মুখোমুখি হয়েছেন মাহফিল কমিটিও।
গতকাল রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের আশারকোটা জামিয়া ইসলামিয়া মিফতাহুল উলুম (মাদরাসা)-এর উদ্যোগে আয়োজিত তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মাদরাসার মুহতামিম মুফতী ফখরুল ইসলাম কাসেমী।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৩০ দিন ধরে মাহফিলের পিছনে সময় ব্যয় করেছি। মাদরাসার ওস্তাদ-ছাত্র এবং এলাকাবাসী তাফসির মাহফিল সফল করতে নানানভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন। এই মাহফিলের প্রধান বক্তা ছিলেন ফেনী দাগনভুইয়াঁ আশরাফুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতী ইউসুফ কাসেমী। তাকে কেন্দ্র করেই এই বিশাল আয়োজন। অথচ তিনি ২০ মিনিটে দেরি হওয়ার কারণ দেখিয়ে ওয়াজ না করেই চলে গেলেন।
মাদরাসার মুহতামিম আরও বলেন, মাহফিলের অংশ হিসেবে বিকেল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কার্যক্রম চলছিলো। বিশেষ বক্তার বয়ানের পর প্রধান বক্তা ৯.৩০ মিনিটে স্টেইজে উঠার কথা ছিলো। কিন্তু বিশেষ বক্তা আলোচনা সাজিয়ে গুছিয়ে শেষ করতে নির্দিষ্ট সময়ের ২০ মিনিট অতিরিক্ত করে ৯.৫০ পর্যন্ত বক্তব্য চালিয়ে যান। পরবর্তীতে প্রধান বক্তা ওয়াজ না করেই শুধুমাত্র মুনাজাত করে চলে যান।
তিনি বলেন, একটা মাহফিল সফল করতে কতো শ্রম দিতে হয় তা একমাত্র আয়োজন সংশ্লিষ্টরাই জানেন। আমরা দীর্ঘ মাসব্যাপী এই মাহফিলটি সফল করতে নানান কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছি। শুধুমাত্র প্রধান বক্তাকে ঘিরেই এতবড় আয়োজন কিন্তু তাঁর ২০ মিনিটের কাছে আমাদের মাসব্যাপী কষ্ট তুচ্ছ হয়ে গেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক লাইভে এর সমালোচনা করে মাহফিল কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা মাসব্যাপী কষ্ট করেছি কিন্তু প্রধান বক্তা আমাদের সাজানো গোছানো মাহফিল নষ্ট করে দিছেন। তার কারণে উপস্থিত শ্রোতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছেন। আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ইউসুফ ফোনকলে গণমাধ্যম পরিচয় পেয়ে কোন ধরনের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ওয়াজ না করে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।